বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

চখাচখি

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

চখাচখি

শীতের পাখি চখাচখি। এরা অ্যানাটিডি পরিবারভুক্ত টাডোর্না প্রজাতির দারুচিনি রঙের এক প্রজাতির বড় হাঁস। খয়রা চখাপখি নামেও এদের পরিচিতি রয়েছে। শীতের সময় এরা পরিযায়ী হয়ে আমাদের দেশে আসে। তখন বড় হাওর, জলাশয় ও নদনদীতে এদের দেখা

যায়। চখাচখি সব সময় জোড়ায় জোড়ায় থাকে। পুরুষ হাঁসটিকে ডাকা হয় চখা আর স্ত্রী হাঁসটিকে চখি। এই দুইয়ে মিলেই নাম হয়েছে চখাচখি। শ্রীমঙ্গলের সৌখিন ফটোগ্রাফার খোকন থৌনাউজম রাজশাহীর পদ্মা নদীর চর থেকে এই চখাচখির ছবি ক্যামেরা বন্দী করেছিলেন। পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, ইংরেজি নাম Ruddy Shelduck. আর বৈজ্ঞানিক নাম Tadorna ferruginea. আই ইউ সি এন’র. তালিকায় এরা ন্যূনতম বিপদমুক্ত। আমাদের দেশে বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এদের দৈর্ঘ্য ৬৪ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় দেড় কিলোগ্রাম। চখা ও চখির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। চখা কমলা-বাদামি থেকে দারুচিনি বর্ণের। মাথা ও ঘাড় হালকা বাদামি। ডানায় ধাতব-সবুজ পতাকা ও সাদা ঢাকনি-পালক রয়েছে। লেজ কালো। চখি আকারে সামান্য ছোট। মাথা ফিকে রঙের। চখাচখি উভয়েরই চোখ বাদামি। ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা কালো। এরা প্রধানত নিশাচর। তবে ভোর ও সন্ধ্যাবেলায়ও সক্রিয় থাকে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে শস্যদানা, অঙ্কুরিত উদ্ভিদ, নরম পাতা, চিংড়ি ও কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী, শামুক, জলজ পোকামাকড়, কেঁচো, ব্যাঙ, সরীসৃপ ইত্যাদি।  মে-জুন মাস এদের প্রজননকাল। এ সময় তিব্বত ও উত্তর এশিয়ার বিভিন্ন অংশে এদের প্রজনন ঘটে।

 উঁচু মালভূমির মধ্যে যেসব জলাভূমি আছে, তার পাশে মাটির গর্তে পালক দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম দেয় ৬ থেকে ১০টি। চখি যখন ডিম দেয় তখন চখা পাহারা দেয়। ডিম ফোটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। ৫৫ দিনে বাচ্চা উড়তে শেখে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, চখাচখি হলো শীতের পাখি। শীতপ্রধান দেশ থেকে একটু উষ্ণতার জন্য আমাদের দেশে আসে। যেহেতু তারা আকারে বড় ও শরীরে মাংস বেশি তাই তারা বন্দুক, বিষটোপ ও জালের শিকারীদের কবলে পড়ে। আমাদের  খেয়াল রাখতে হবে তারা যেন শিকার না হয় ও তাদের আবাসস্থল যেন ধ্বংস করা না হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর