শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিদেশ নয় বিমানবন্দর

মির্জা মেহেদী তমাল

বিদেশ নয় বিমানবন্দর

জাতীয় একটি দৈনিকে ‘ভিসা প্রসেসিং’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। যেখানে হংকংয়ের কিছু ভিসা প্রসেস করা হবে বলে জানানো হয়। যোগাযোগের ঠিকানা দেওয়া হয় উত্তরা, হাউস বিল্ডিং, ঢাকা। সঙ্গে দেওয়া ছিল একটি ফোন নম্বর। সেই নম্বর দেখে যোগাযোগ করেন নারায়ণগঞ্জের জিয়াউল হক সুমন ও হায়াত আহম্মদ। তাদের সঙ্গে দুই ব্যক্তি দেখা করে যমুনা ফিউচার পার্কের রেস্টুরেন্টে। হংকং পৌঁছার পর প্রত্যেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা করে দিতে হবে বলে মৌখিক চুক্তি হয়। ফ্লাইটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত তারিখে যাত্রার আগে মোটা অঙ্কের টাকা ডলারে এক্সচেঞ্জ করা হয়। ফ্লাইটের দিন দুই যাত্রী যে টাকা হংকং গিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, তা থেকে আট হাজার ডলার বিদেশে পাঠানোর দুই লোককে দিয়ে দেন। এরপর দুই যাত্রীকে বিমানবন্দরের ভিতরে প্রবেশ করতে বলে। তারা একটু পর আসার কথা বলে ১ নং টার্মিনালের দিকে চলে যায়। এরপর আর ফিরে আসেনি। ফোনে আসছি-আসছি বললেও কিছুক্ষণ পর মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। তাদের আর খোঁজ মেলেনি। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন গাইবান্ধার মামুনুর রশীদ। তিনিও বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে মোটা অংকের টাকা খুইয়েছেন। তারা বিজ্ঞাপন দেখে ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন। হংকংয়ে চাকরির অফার পেয়ে চার লাখ টাকার চুক্তি হয়। তাদের জানানো হয়  সরাসরি হংকং যাওয়া যাবে না। নেপাল হয়ে হংকং যেতে হবে। সেজন্য একটি বেসরকারি এয়ারলাইনসের টিকিট কেটে দেওয়া হয়। চুক্তি মতো ডলার এক্সচেঞ্জ করার কথা বলে চার লাখ টাকা নেয় প্রতারকরা। সেই রাতেও প্রতারকদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। পরদিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রতারকদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফোনে ও কোথাও প্রতারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বুঝতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরই মধ্যে দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারক চক্রের দুই সদস্য তানভীর আহম্মেদ ও নাজমুল হাসান সুমনকে সিআইডি গ্রেফতার করে। হংকং যাওয়ার জন্য প্রতারণার শিকার সেই ব্যক্তিরা জানতে পেরে সিআইডিতে যোগাযোগ করে। তারা তানভীর ও সুমনকে শনাক্ত করে প্রতারক হিসেবে। সিআইডি তাদের জেরা করে। সিআইডি জানতে পারে, তারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে হংকং পাঠানোর নামে প্রতারণা করে আসছিল। এই দুজন প্রথমে বিজ্ঞাপন দেয়। এরপর তাদের দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে তারা পরবর্তী ফাঁদ পাতে। তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হারিয়েছেন অনেকে। এমন অনেক ভুক্তভোগীকে পেয়েছে সিআইডি। সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিজ্ঞাপন দেখে এই প্রতারকদের দেওয়া ফোন নম্বরে কেউ কল করলে হংকংয়ে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখাত তারা। অথচ তাদের নিজস্ব কোনো অফিস নেই। তারা অফিস না থাকার বিষয়টি আড়াল করে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে দেখা করত যমুনা ফিউচার পার্কের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। সেখানেই হংকং পাঠানোর জন্য মৌখিক চুক্তি করত। এরপর চুক্তি অনুযায়ী টাকা নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিদেশ না পাঠিয়েই লাপাত্তা হতো তারা। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তানভীরের অ্যাকাউন্টে ১৯ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। যা সে বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রতারণা করে হাতিয়েছে। তার অ্যাকাউন্টটি জব্দ করা হয়েছে।’ যাচাই-বাছাই ছাড়া পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপানো ও বিজ্ঞাপন দেখে ফাঁদে পা না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘পত্রিকাগুলো বিজ্ঞাপন ছাপানোর ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হয়ে, যাচাই-বাছাই করে ছাপানোর ব্যবস্থা থাকলে প্রতারকরা এ সুযোগ নিতে পারবে না। আর যারা বিজ্ঞাপন দেখেই সরল বিশ্বাসে ফাঁদে পা দিচ্ছেন, তাদেরও প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির দেওয়া তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরই চুক্তি বা লেনদেনে যাওয়া উচিত। তাহলেও এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর