শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাবাকে হজে পাঠানো হলো না রাব্বির

পাবনা প্রতিনিধি

বাবাকে হজে পাঠানো হলো না রাব্বির

ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত আমির হোসেন রাব্বির লাশ গতকাল সকালে তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে।

লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ওই গ্রামে পৌঁছলে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে যায় পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার চরপাড়া গ্রামের বাতাস। আগামী বছর বাবাকে হজে পাঠানোর কথা ছিল রাব্বির। রাব্বির স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, আগামী শবেবরাতের ছুটিতে বাড়ি আসার কথা ছিল তার। বাড়িতে পাকা ঘর করার জন্য বালি ও ইটের স্তূপ করে রাখা হয়েছে। রাব্বি আগুনে পুড়ে নিহত হওয়ায় সব স্বপ্নই শেষ হয়ে গেল বলে জানান স্বজনরা। প্রসঙ্গত, বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাে র ঘটনায় নিহত হয় আমির হোসেন রাব্বি। তিনি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আতাইকুলা ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে। তিনি ওই ভবনের ১১ তলার ইকু লাইন বায়িং হাউসে কর্মরত ছিলেন। ২০১৪ সালে পাবনা সরকারি এ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করে সরকারি চাকরির জন্য বসে না থেকে তিনি ঢাকার ইকু লাইন বায়িং হাউসে কর্মজীবন শুরু করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে সন্তান এভাবে চলে যাওয়ায় সবাই হতবাক হয়ে পড়েছেন। রাব্বির বাবা আইয়ুব আলী জানান, ঢাকার বহুতল ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত জরুরি বহির্নির্গমন ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় অকালে জীবন দিতে হলো তার ছেলেকে। এভাবে আর কত মানুষ সন্তান হারা হবে? দেশে এত উন্নয়ন হচ্ছে অথচ সরকার এসবের ওপর নজর দেয় না কেন? এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে তার সন্তান মারা যাওয়ার জন্য দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন আমাকে আমার ছেলের দাফন কাফনের জন্য অনুদান দিয়েছে। তাদের এই অনুদান ফিরিয়ে দিয়ে আমি অপমান করিনি। তবে এই সামান্য অর্থ দিয়ে কী হবে? তার ছেলে প্রতি মাসে পঞ্চান্ন হাজার টাকা বেতন পেত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে নিহতের ছোট বোন ফারজানা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগামী বছর আমার বাবাকে হজে পাঠানোর কথা ছিল। আমার ভাইয়ের সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হলো না। বাড়ির উঠানে ইটের স্তূপ করে রেখেছেন শবেবরাতের ছুটিতে এসে বাড়ির কাজ শুরু করবেন, তারপর আমরা তাকে বিয়ে দিব, সব স্বপ্নই ফিকে হয়ে গেল।

সর্বশেষ খবর