শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে সহস্রাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

যে কোনো সময় ঘটতে পারে অগ্নিকাণ্ড, প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেই

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে রয়েছে সহস্রাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, মার্কেট ও বস্তি এলাকা। কারণ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের  ‘ফায়ার সেফটি প্ল্যান’ অনুযায়ী ভবনে ন্যূনতম ৫০ জন বসবাসকারীর জন্য একটি জরুরি নির্গমন সিঁড়ি থাকবে। ৫০০ জন বাস করলে দুইটি, এক হাজার জনের জন্য তিনটি এবং এক হাজারের ঊর্ধ্বের ক্ষেত্রে চারটি জরুরি নির্গমন সিঁড়ি থাকতে হবে। অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ বিধিমালা-২০১৪ এ এমন নিয়ম উল্লেখ আছে। কিন্তু বাস্তবে এ নিয়ম কোনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেই মানা হয়নি। বরং চট্টগ্রামে যার যেমন ইচ্ছা তেমনিভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বহুতল ভবনে বাস করছেন চট্টগ্রামের মানুষ। ব্যক্তিগত স্থাপনা, মার্কেটসহ সবক্ষেত্রেই অভিন্ন চিত্র। 

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি চাক্তাইয়ের ভেড়া মার্কেট বস্তিতে আগুনে ৮ জন, ঢাকার চকবাজার চুড়িহাট্টায় ৬৭ এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনে গতকাল পর্যন্ত ১৯ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনায় দেশের ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাগুলোর বিষয়টি সামনে আসে। 

অভিযোগ আছে, ভবন নির্মাণের সময় মালিক অগ্নিঝুঁকিসহ এ জাতীয় কোনো দুর্ঘটনায় বিবেচনা রাখে না। চিন্তা-চেতনায় থাকে শুধু বাণিজ্যিক মনোভাব। কোথাও এক ইঞ্চি জায়গা না ছেড়ে ভবনে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যাবে এই চিন্তাটাই মাথায় ঘুরপাক খায় মালিকদের। প্রতি ইঞ্চি জায়গা ব্যবহৃত হয় বাণিজ্যিকভাবে। ফলে ঘটছে অগ্নিদুর্ঘটনা। আর এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণহানি। পক্ষান্তরে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ভবন মালিকদের বাণিজ্যিক মানসিকতা, তদারককারী প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতা, মানুষের অসচেতনতা, প্রশাসনিক জটিলতা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা কারণে প্রতিনিয়তই অগ্নিদুর্ঘটনা বাড়ছে বলে জানা যায়। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ফায়ার সার্ভিস ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সময়ে চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে চট্টগ্রামে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকিপূর্ণ ও অতিঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে বিভক্ত করে। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দী বলেন, ‘নগরের সব কয়টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি। কিন্তু পরিদর্শনকালে কোথাও ‘ফায়ার সেফটি প্ল্যান’ কার্যকর দেখা যায়নি। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান অগ্নিঝুঁকিতে আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিস দিয়েছি। যাতে যে কোনো দুর্ঘটনায় ঝুঁকি এড়ানো যায়।’  তিনি বলেন, ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পানির প্রাকৃতিক উৎস প্রায় নেই বললেই চলে। বিশেষত মার্কেটগুলোতে পর্যাপ্ত আগুন নেভানোর মতো সরঞ্জাম নেই। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নগরের রিয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেন ও জহুর হকার্স মার্কেটের। শতবর্ষী এসব মার্কেটে দুর্ঘটনা ঘটলে পাওয়া যাবে না পানি, ঢুকতে পারবে না ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও।’ সরেজমিন দেখা যায়, শতবর্ষী রিয়াজুদ্দিন বাজারে ছোটবড় শতাধিক মার্কেট আছে। দোকান রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। তামাকুমন্ডি লেনে অর্ধশত মার্কেটে আছে প্রায় ৫ হাজারের মতো দোকান। জহুর হকার্স মার্কেটটি গড়ে উঠেছে একেবারে টিনশেড বস্তির মতোই। এখানেও আছে পাঁচ শতাধিক দোকান।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি সালেহ আহমদ সুলেমান বলেন, ‘চট্টগ্রামের অনেক বড় বড় মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। অথচ এসব স্থাপনার তৈরিতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। আর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় দরকার হয় সুচিন্তিত মানসিকতা ও পরিকল্পনা। কিন্তু তা না করায় অগ্নিদুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। নিজেরা সচেতন এবং প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলে প্রাণহানিসহ ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব।’

সর্বশেষ খবর