সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাউন্সিল চায় তৃণমূল বিএনপি

খালেদা জিয়ার মুক্তির আগে হাইকমান্ডের ‘না’

মাহমুদ আজহার

বিএনপির সর্বশেষ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা চান, যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশেও দলের জাতীয় কাউন্সিল হওয়া দরকার। দলের সিনিয়র নেতারা সর্বশেষ মাঠ পর্যায়ে সফরে গেলে তৃণমূল বিএনপি তাদের কাছে এ বার্তা দিয়েছে। তারা বলেছেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সব পর্যায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হতে হবে। কোনোভাবেই পকেট কমিটি করা যাবে না।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের ক্ষুদ্র একটি অংশ তৃণমূলের সঙ্গে একমত। তবে নীতিনির্ধারকদের বড় অংশই বলছে ভিন্ন কথা। তাদের মতে, এ মুহূর্তে দলের প্রধান বেগম জিয়ার মুক্তি জরুরি। তাকে ছাড়া কোনোভাবেই কাউন্সিল হতে পারে না। বেগম জিয়ার মুক্তির আগে বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অসম্পূর্ণ কমিটি, জেলা বিএনপির অসম্পূর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠনের পক্ষে তারা।

কাউন্সিল প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমাদের পোলাও বিরানি খেয়ে কাউন্সিল করার দরকার নেই, প্রয়োজনে আমরা ডালভাত খেয়ে কাউন্সিল করব। কিন্তু সবার কথা কাউন্সিলে শোনা হোক। খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার পদ ছাড়া সব পদ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত  হোক- তা চান তৈমূর আলম খন্দকার।  বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, ‘কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি পুনর্গঠনের কোনো বিকল্প নেই। একইভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনও জোরদার করতে হবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে নতুন ভোটের উদ্যোগ নিতে সর্বত্রই চাপ প্রয়োগ করতে হবে।’ জানা যায়, জেলা কমিটির নেতাদের সঙ্গে স্কাইপিতে কথা বলছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অসম্পূর্ণ কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করতে নির্ধারিত সময়সীমাও বেঁধে দিচ্ছেন তিনি। ৩০টির মতো জেলার প্রতিনিধির সঙ্গে তার কথা হয়েছে। বাকি জেলা নেতাদের সঙ্গেও পর্যায়ক্রমে কথা হবে তার। এরই মধ্যে কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন ড্যাব, প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাবের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের হাতে তিন মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে দিতে হবে। নইলে ওইসব সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটি স্বাভাবিকভাবেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সূত্রমতে, তারেক রহমানও আপাতত কাউন্সিলের পক্ষে নন বলে তিনি ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এখন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। কারাগারে তিনি খুবই অসুস্থ। তিনি উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। বসে থাকতে পারছেন না। খেতে পারছেন না। সাড়ে তিন মাস ধরে তার কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। তাই দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। বিএনপিপ্রধান মুক্তি পেলে তিনিই দলের কাউন্সিলের উপযুক্ত সময় বেছে নেবেন।’ বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলছেন, কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া কাউন্সিল হলে তাকে ‘মাইনাস’ করার ষড়যন্ত্র হতে পারে। এমনকি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।  বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, দল গোছাতে আরও কিছু দিন লাগবে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জামিনে মুক্ত করাতে হবে। বেগম জিয়ার মুক্তিও জরুরি। এর আগে তৃণমূলের পাশাপাশি বিএনপির অঙ্গসংগঠনের কিছু কমিটি হতে পারে। এরপর বিএনপির জেলা কমিটি পুনর্গঠনে হাত দেওয়া হবে। বেগম জিয়ার মুক্তির আগে কাউন্সিল না হলে নির্বাহী কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কাউন্সিল করার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বা এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।   সূত্র জানায়, দলটির ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির বেগম সরোয়ারী রহমান, হারুনুর রশিদ খান মুন্নু, ফজলুর রহমান পটলসহ সাতজন মারা গেছেন। ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে কমিটি ঘোষণার পরপরই পদত্যাগ করেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। ইনাম আহমেদ চৌধুরী দলত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র ও সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদ দুটি কমিটি ঘোষণার পরই ফাঁকা। নির্বাহী কমিটির সাতটি আন্তর্জাতিক সম্পাদকের মধ্যে দুটি ফাঁকা। সহ-যুববিষয়ক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হলেও যুববিষয়ক সম্পাদকের পদটি এখনো ফাঁকা। এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মারা গেছেন চারজন। নির্বাহী কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ দলত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এসব ফাঁকা পদে নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সর্বশেষ খবর