সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ৪৫

পটুয়াখালীর নদ-নদী ডুবোচরে নাকাল

সঞ্জয় কুমার দাস লিটু, পটুয়াখালী

পটুয়াখালীর নদ-নদী ডুবোচরে নাকাল

পটুয়াখালী জেলার ভিতরে ও বাইরে দিয়ে বয়ে গেছে বড় বড় অন্তত ১৬টি নদী। শাখা নদী ছিল বেশ কিছু। এগুলোই ছিল মানুষের যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু সময়ের ব্যবধান আর প্রকৃতির বৈরিতায় নাব্যতা হুমকির মুখে পড়েছে পটুয়াখালীর বেশির ভাগ নদী। একসময়ের খড়স্রোতা নদীগুলোয় পলি জমে চর জেগে নাব্যতা হারিয়েছে। কোথাও কোথাও আবার নদী শুকিয়ে হয়েছে খাল। নদী বেষ্টিত পটুয়াখালী জেলা শহরের বুক চিরে পূর্ব দিকে বয়ে গেছে লোহালিয়া নদী। শহরের উত্তর দিকে লাউকাঠি আর পশ্চিমে রাক্ষুসী বুড়ীশ্বর, যা বর্তমানে পায়রা নদী। একসময় বর্ষা মৌসুমে এসব নদীর ঢেউয়ের গর্জন অহরহ ভেসে আসত শহরময় মানুষের কানে। জোয়ারে শহরের খালগুলোয় পানি ঢুকে টইটম্বুর হয়ে যেত আবার ভাটায় শুকিয়ে যেত। বর্তমানে শহরের মানুষ দেখতে পায় না কখন জোয়ার-ভাটা হয়। পটুয়াখালীতে ভয়াবহতা উগ্রগ্রাসী আর উত্তাল নদীর মধ্যে অন্যতম ছিল তেঁতুলিয়া, বুড়া গৌরাঙ্গ, পায়রা, রাবনাবাদ, কারখানা, দাঁড়ছিঁড়া ও আগুনমুখা। অতীতে বড় বড় সাতটি নদী মিলিত হয়ে মোহনায় সৃষ্টি হয়েছে এক বিশাল নদী। জেলার বাউফল, গলাচিপা, কলাপাড়া উপজেলার বুক চিরে তেঁতুলিয়া, রাবনাবাদ, বুড়া গৌরাঙ্গ, ডিক্রি, আন্ধারমানিক, দাঁড়ছিঁরা ও কাজল এই সাতটি নদী মোহনায় মিলিত হয়ে নাম হয় আগুনমুখা। একসময় আগুনমুখা নদীতে যে কোনো নৌযানে চলাচল করতে আঁতকে উঠত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। নদীভাঙনে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে ও পলি জমে সেই আগুনমুখায় জেগে উঠেছে বহু চর। নদীপাড়ের মানুষের যাদের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তারা বসতি গড়ে তুলেছে জেগে ওঠা চরে। তাই এখনো বড় নদী থাকলেও নেই তার চিরচেনা রূপ। বর্ষা মৌসুমে রূদ্ররোষ নেই, নেই শোঁ শোঁ শব্দের উত্তাল ঢেউ। নাব্যতা সংকট আর চর জেগে ওঠায় নদীর যৌবন যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। জেলাজুড়ে যে নদীগুলো প্রবহমান ছিল তার মধ্যে লোহালিয়া, লাউকাঠি, পায়রা, পুরাকাটা, শিববাড়িয়া, সোনাতলা, কমলাকান্ত, শ্রীমন্ত অন্যতম। এ ছাড়া জেলার অভ্যন্তরে বহু শাখানদী ছিল, যেগুলো দিয়ে চলত লঞ্চ ও বড় বড় বাহারি নৌকা, যা বর্তমানে ভরাট হয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। একসময় এ অঞ্চলের মানুষ পাওয়ার পাম্প কী তা জানত না। কৃষকের চাষাবাদ নির্ভর করত জোয়ার-ভাটার ওপর। অনেক নদী ভরাট হয়ে প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। গড়ে উঠেছে পাকা ভবন। এর মধ্যে লাউকাঠি, লোহালিয়া, কলাপাড়ার আন্ধারমানিক ও শিববাড়িয়া নদীর পাড় দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে প্রতিদিন গড়ে আটটি যাত্রীবাহী ডাবল ডেকার লঞ্চসহ চলাচল করত অর্ধশতাধিক নৌযান। ৩৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথে গোটা রাত কেটে যায় পদ্মা, মেঘনা, তেঁতুলিয়া, কারখানা ও লোহালিয়া নদী পাড়ি দিতে। নদীভাঙন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পলি পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এসব নৌপথ। নাব্যতা সংকটে ডুবোচরে আটকে ব্যাহত হচ্ছে নৌযানগুলোর স্বাভাবিক চলাচল। কারখানা নদীর বাহেরচর, কবাই, আফালকাঠি, কারখানা, অমরখালী, ঝিলনা, বগা এবং লোহালিয়া নদীর লোহালিয়া পয়েন্টে নাব্যতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এক থেকে দেড় ঘণ্টা লঞ্চ বন্ধ রাখতে হয়। জোয়ার না আসা পর্যন্ত ডুবোচরে আটকে পড়া এসব লঞ্চ গন্তব্যের উদ্দেশে ছাড়তে পারে না। এতে ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীসাধারণ।

সর্বশেষ খবর