সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

মিথ্যা সত্যায়নে সর্বনাশ

মির্জা মেহেদী তমাল

মিথ্যা সত্যায়নে সর্বনাশ

ঢাকার তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল মতিন বাবুল উচ্চ শিক্ষার্থে লন্ডন যাচ্ছেন। আর এ কারণে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ফার্মগেটের এক দোকান থেকে নোটারি করিয়েছিলেন বাবুল। কিন্তু নোটারিতে যে আইনজীবীর স্বাক্ষর ছিল, এমন নামে বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত কোনো আইনজীবী নেই বলে পরবর্তীতে জানা যায়। ফলে তাকে পুনরায় নোটারি করাতে হয়। মুন্সীগঞ্জের লন্ডন প্রবাসী সুজন ইসলাম সম্প্রতি দেশে এসে বিয়ে করে গেছেন। স্ত্রীকে বিদেশে নিতে বিয়ের কাবিননামা পাঠানোর জন্য বাড়িতে খবর পাঠিয়েছেন। স্থানীয় কাজী অফিস থেকে কাবিননামা উঠিয়ে ঢাকায় নোটারি করাতে যায় সুজনের ছোটভাই সাইফুল ইসলাম যোবায়ের। তোপখানা রোডের ফুটপাথে টাইপ রাইটারের সামনে একটি সাইনবোর্ড দেখে সেখানে যান। সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘এখানে নোটারি পাবলিক করানো হয়’। তাড়াতাড়ি কাজটি করানোর জন্য যোবায়ের সেখান থেকেই করবে বলে চিন্তা করেন। সামনের এক টেবিলে বসে থাকা লোকটির সঙ্গে কথা বলেন। লোকটি তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নোটারিসহ যাবতীয় কাজ করিয়ে দেবে। লোকটি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের সিল দিয়ে নোটারির কাগজপত্র রেডি করে রাখে। ঘণ্টাখানেক পর যোবায়ের কাগজপত্র নিয়ে যায়। কিন্তু ভিসা নিতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। ব্রিটিশ দূতাবাস কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রাখার সময় নোটারি পাবলিকের কাগজপত্র ভুয়া বলে জানতে পারে। সুজন ইসলামের স্ত্রীর লন্ডন যাওয়া আটকে যায়। একটি এনজিও কর্মকর্তা মোবারক হোসেন। পেশাগত কারণে সম্প্রতি সুযোগ হয়েছিল সুইডেন যাওয়ার। কিন্তু যাওয়ার আগে ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজে তাকে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ভিসার জন্য সুইডিশ দূতাবাসে কাগজপত্র দিলে দূতাবাস থেকে জানানো হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া সত্যায়নটিতে নকল সই ব্যবহার করা হয়েছে। পরে মোবারক বিষয়টি নিয়ে খোঁজ করলে তার অফিস সহকারী জানান, মন্ত্রণালয়ের সত্যায়নের কাজ দ্রুত করানোর জন্য অফিসের পিয়ন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনের দালালের মাধ্যমে সইয়ের কাজটি করেছিলেন। শুধু এ তিনটি ঘটনাই নয়। গুরুত্বপূর্ণ সব দলিল নোটারি করাতে এসে প্রতিদিন এভাবেই প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। নোটারি পাবলিকের নামে সারা দেশে প্রকাশ্যে চলছে প্রতারণা বাণিজ্য। কিছু অসাধু আইনজীবী এবং একটি বড় দালাল চক্র এই বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের প্রতারণায় প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন হাজারো নিরীহ মানুষ। এই দালালরা শুধু নোটারি করেই অপরাধ করছে না, তারা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সই এবং সিলও জাল করে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।  এসব অনিয়মের কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ কাজটি আজ প্রহসনে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমানে সারা দেশে ৮২৮ জন সরকারি তালিকাভুক্ত নোটারি পাবলিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে শুধু রাজধানী ঢাকায় নোটারি পাবলিকের সংখ্যা প্রায় ৩০০। অধিকাংশ স্থানেই লাইসেন্স ছাড়া নোটারি পাবলিকের ব্যবসা চলছে। খোদ ঢাকায়ই হাজারখানেক নোটারি পাবলিক হিসেবে কাজ করছেন। আর সারা দেশে অবৈধ নোটারি পাবলিকের সংখ্যা হবে কয়েক হাজার। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে নোটারিয়ান কাজ সম্পাদন ও ভুয়া কাগজপত্রে নোটারিয়ান করা যায়। নোটারির কাজ হয় রাজধানীর এমন বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, অনেক অবৈধ নোটারি পাবলিক নিজেরাই সিলমোহর বানিয়ে নিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর