মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্ষমতার অংশীদারিত্ব না পেয়ে ইসলামী দলে ক্ষোভ হতাশা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ক্ষমতার অংশীদারিত্ব না পেয়ে ইসলামী দলে ক্ষোভ হতাশা

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একাদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হলেও মিত্র ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ, হতাশা আর স্থবিরতা। ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ৭০ ইসলামী দল মিত্রতা গড়ে তুললেও একটি আসনেও ছাড় পাননি তারা। ইসলামী দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারা আশা করেছিলেন, সংসদে যেতে না পারলেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভায় জায়গা দেবেন। তাও হয়নি। এরপর আশায় বুক বেঁধে রাজনৈতিক পদে নিয়োগের জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এতেও ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন নামেমাত্র মহজোটে থাকবেন কি না।

এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিত্রতা থাকায় নানা ইস্যুতে রাজপথেও কর্মসূচি দিতে পারছে না তারা। বিবৃতি আর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনেকটাই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে দলের কার্যক্রম। হতাশা থেকে নয়া মেরুকরণের দিকে নজর দিচ্ছেন দলগুলোর নেতারা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলে দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে যথাযথ মূল্যায়ন পাননি। এ জন্য এখন বিকল্প পথ গ্রহণের দিকেও ঝুঁকতে পারেন। জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গড়ে তুলেছিল ৭০টি ইসলামী দল। এসব দলের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ এবং এর মিত্র জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে মহাজোট গঠন করে। সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ইসলামী দলও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে মহজোটে যোগ দেয়। এমনকি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার সখ্য গড়ে তোলে। নির্বাচন-পরবর্তী ভাবনা নিয়ে নেতাদের মধ্যে ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথপরিক্রমা ও করণীয় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন সরকারের মিত্র ইসলামী দলের নেতারা। ইসলামী ঐক্যজোট আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করেও প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পাওয়ায় দলটি হতাশায় রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেও শেষ পর্যন্ত তা জমা দেননি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী। আর সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন দলের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। ইসলামী ঐক্যজোটের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসাইন কুমিল্লা-১ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন তা জমা দিতে পারেননি দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী। জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইসলামী ঐক্যজোট তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমরা দলকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে যাব।’

এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম পীর বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে সংকট চলছে এর চেয়ে বড় সংকট হলো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। এ সংকটের সমাধান না হলে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না, যা বিগত দিনের কর্মকান্ডে  প্রমাণিত। আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, সাবেক এমপি এম এ আউয়াল ও অ্যাডভোকেট মো. নূরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বাধীন ১৫-দলীয় ইসলামী জোট ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স ভেঙে একটি একক রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হতে পারে শিগগিরই। ১৫-দলীয় ইসলামী ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের শরিকরা মহাজোট নেতার বিমাতাসুলভ আচরণে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসা ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের শরিক বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আবদুর রশীদ প্রধান বলেন, ‘আমাদের লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।’

মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ১০ বছর ধরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরের দায়িত্ব পালন করলেও নিজে কখনো নির্বাচনে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু এবার তার জোট ও দলের নেতারা টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিত্ব পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। তা না পাওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা আর ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু তা বস্তবায়ন হয়নি। আমি কিছু চাইনি। কিন্তু আমার দল ও জোটের নেতা-কর্মীরা তো চান। তাদের তো মূল্যায়ন করতে হবে।’ তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল ১৫-দলীয় ইসলামী জোট ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের কো-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র হিসেবে যোগদান করেন। লক্ষ্মীপুর-১ আসনের জন্য মহাজোট থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এ আসন থেকে তিনি দশম সংসদের এমপি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘একটু তো ক্ষোভ আছেই জোটের শরিক দলের সবার মধ্যেই। এবারের সংসদে ইসলামী দলগুলোর কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। তাই আমরা যারা ইসলামী দলের প্রতিনিধিত্ব করছি তাদের মধ্যে ক্ষোভও আছে, হতাশাও আছে। আশা করেছিলাম আমাদের পক্ষ থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তবে আমরা এখনো আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী আমাদের মূল্যায়ন করবেন।’ মহাজোট থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ নিজ দলের প্রতীকে চাঁদপুর-৫ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বাংলাদেশ জাকের পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের একাংশ, সম্মিলিত ইসলামী জোট, ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগের প্রতিশ্রুতি রাখেনি। তবে তারা জানান, যদি সরকার কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করে এবং নির্বাচনী শ্রতিশ্রুতি পূরণ না করে, তবে ভবিষ্যতে বৃহৎ ইসলামী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সর্বশেষ খবর