মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রথম তদন্তে হচ্ছে ভুল

মির্জা মেহেদী তমাল

প্রথম তদন্তে হচ্ছে ভুল

পুলিশ কনস্টেবল মো. সহিদুল ইসলামের একমাত্র ছেলে রিয়াজুল ইসলাম মারা যান ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর। গোপালগঞ্জ থানার পুলিশ ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করে বলে, রিয়াজ নেশা করতে গিয়ে নেশাদ্রব্যের বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশে পাঁচ বছর পর ঘটনাটি আবার তদন্ত করে পুলিশ বলছে, রিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করেছে তারই বন্ধুরা। তদন্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্ত শেষে মোট ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ঘটনা থেকে এটাই বোঝা যায় যে, থানা-পুলিশের তদন্ত হচ্ছে ভাসা ভাসা। ঠিকমতো তত্ত্বাবধান হয় না। পুলিশে সঠিক লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। তাদের প্রশিক্ষণও হচ্ছে না ঠিকমতো। আগের তদন্তে ভুল পেলে ওই তদন্তকারীর ইউনিট প্রধানের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা প্রয়োজন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পিবিআইর তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আমূল বদলে যাওয়া তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়াও অনেক মামলার তদন্তে নানান মাত্রার ভুলত্রুটি বেরিয়ে এসেছে। অনেক মামলায় তাদের অধিকতর তদন্তে আসামির সংখ্যা বেড়েছে বা কমেছে। অনেক ক্ষেত্রে মামলার অভিযোগের ধারাও বদলাতে হয়েছে। পিবিআই-প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মামলা তদন্ত করতে যে পরিমাণ মেধা ও সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল, তা পূর্ববর্তী তদন্তকর্মকর্তারা হয়তো দেননি বা দিতে পারেননি বলে মনে হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা প্রভাবিত হয়ে তদন্তে গাফিলতি করেছেন কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে বনজ কুমার বলেন, সেটা প্রমাণ করা কঠিন। পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তাদের অনেকে বলেছেন, কিছু মামলায় ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের কারণে ভুলভাবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার একটি ইউক্যালিপটাস গাছের বাগান থেকে ছবের আলী নামে এক বৃদ্ধের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ছবেরের স্ত্রী মর্জিনা বিবি আদালতে হত্যা মামলা করেন। প্রথমে শেরপুর থানার পুলিশ ও পরে একজন সহকারী পুলিশ সুপার ঘটনাটি তদন্ত করেন। দুটি প্রতিবেদনেই বলা হয়, ছবের আলী আত্মহত্যা করেছেন। আদালতের নির্দেশে ঘটনাটি আবার তদন্ত করে বগুড়া পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুর রউফ ম ল যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আপন বোন, দুলাভাই ও ভাগ্নের হাতে খুন হয়েছেন ছবের আলী। গলায় মাফলার পেঁচিয়ে গাছে ঝুলিয়ে পরিকল্পিতভাবে ছবেরকে হত্যা করা হয়। আসামিদের তিনজনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা আগের তদন্তে মূল বিষয়টি উঠে না আসার বিষয়ে বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ছবের আলী আত্মহত্যা করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এ বিষয়টিই তদন্ত প্রতিবেদনে প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া অধিক মামলার চাপের কারণে থানা-পুলিশও হয়তো বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে পারেনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর