মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা

২১ জনের জায়গায় চিকিৎসক ৩ জন

মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর সবচেয়ে বড় উপজেলা মান্দা। ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় লোক সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। এ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম জনবল সংকট চলছে। ফলে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ আছে ২১টি। কিন্তু চিকিৎসক আছেন মাত্র ৩জন। প্রতিদিন ২০০  থেকে ২৫০ জন রোগী বহির্বিভাগে টিকিট কাটেন। এছাড়া জরুরি ও অন্তর্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন আরও ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাবে রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এখানে চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ২১টি। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৩জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তাদের একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও)। চিকিৎসকের ১৮টি শূন্য পদের মধ্যে ১০টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। এছাড়া শূন্য রয়েছে ৮জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ। এ অবস্থায় চিকিৎসা সেবা চালিয়ে নেওয়ার স্বার্থে উপজেলার বিভিন্ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ৭ জন স্বাস্থ্য সহকারীকে  প্রেষণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন করা হয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগী টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। টিকিট না কেটে  চিকিৎসকের খোঁজখবর নিচ্ছেন আরও অনেকে। বহির্বিভাগের দুটি কক্ষে রোগী  দেখছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাহসিনা বিনতে আবেদ ও স্বাস্থ্য সহকারী রুনা খাতুন। দুটি কক্ষের সামনেই রোগীদের দীর্ঘ সারি। অন্তর্বিভাগের রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার।

ওইদিন সেবা নিতে আসা উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের মমতাজ বিবি ও রুপালী বেগম, ছোটবেলালদহ গ্রামের ইসাহাক আলী, বড়পই গ্রামের সাথী আক্তারসহ অনেকেই বলেন, হাসপাতালে আর আগের মতো চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে সেবা না নিয়েই অনেক সময় ফিরে যেতে হয়। তাদের অভিযোগ, এখানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের (প্রেসক্রিপশন) বেশির ভাগ ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ভাস্কর চন্দ্র ম-ল বলেন, প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ রোগীর সেবা দিতে মাত্র ৩ জন চিকিৎসককে হিমশিম খেতে হয়। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে খালি থাকায় রোগীরা মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, প্রায় ৫ লাখ মানুষ অধ্যুষিত এই উপজেলায় স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে কোনোভাবেই চালানো হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। চিকিৎসক ও জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা একাধিকবার সিভিল সার্জনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু  কোনো কাজ হয়নি।

সিভিল সার্জন মোমিনুল হক বলেন, শুধু মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নয়, জেলার অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও চিকিৎসক সংকট রয়েছে। বিষয়গুলো স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। ৩৯তম বিসিএস থেকে বেশকিছু চিকিৎসক পদায়ন করার কথা রয়েছে। তখন হয়তো সংকট কিছুটা মোচন হবে।

সর্বশেষ খবর