শিরোনাম
বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

তিন বছরেও ৭২ হাজার ভবন চিহ্নিত করা হয়নি

কোনটা ঝুঁকিপূর্ণ কোনটা নয় বোঝা যাচ্ছে না, এসব ভবনে বিশেষ রঙ করতে দুই দফা উদ্যোগ নেওয়া হয়, অগ্রগতি জানেন না কর্মকর্তারা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ ও মাহবুব মমতাজী

তিন বছরেও ৭২ হাজার ভবন চিহ্নিত করা হয়নি

রাজউকের পরিদর্শন দলের সদস্যরা গতকাল নকশার সঙ্গে একটি ভবনের স্থাপনা মিলিয়ে দেখছেন -জয়ীতা রায়

তিন বছরেও ৭২ হাজার ভবনকে বিশেষ রঙে চিহ্নিত করতে পারেনি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ফলে ঢাকায় কোন ভবন ঝুঁকিপূর্ণ আর কোনটা ঝুঁকিমুক্ত তা বুঝতে পারছেন না নগরবাসী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটা ভবন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা চিহ্নিত করা যায় না। তাই সেই বিশেষ রঙের কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ২০১৬ সালে এর জন্য দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে একটি রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের মাধ্যমে সে উদ্যোগ বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তা স্থবির রয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সঠিক পরিসংখ্যান রাজউক কিংবা দুই সিটি করপোরেশনের কাছে নেই। তবে বিভিন্ন সংস্থার আনুমানিক হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় ৭২ হাজার। এর মধ্যে রাজউক ৩২১টি ভবনকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প হলে এসব ভবন যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও সচেতনতা কমিটির এক সভায় বিশেষ রং দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সেগুলোতে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ লেখা-সংবলিত সাইনবোর্ড স্থাপন এবং বিল্ডিং কোড হালনাগাদ করে তা বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থান নিতে রাজউক ও সিটি করপোরেশনকে বলা হয়েছিল। একই সভায় সরকারি পুরনো মেডিকেল কলেজ ভবনগুলো জরুরি ভিত্তিতে পুনঃসংস্কার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মার্কেট ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনার নিরীক্ষা করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরে দুবার প্রাকৃতিক দুর্যোগবিষয়ক মহড়া আয়োজনে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু এর কোনোটিই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি সংশ্লিষ্টরা। এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ জুন তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জাতীয় সংসদে যে ৩২১টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কথা উল্লেখ করেছিলেন, সেগুলোতেও বিশেষ রং দিয়ে চিহ্নিত করা কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বলে সাইনবোর্ডও টানানো হয়নি। এ বিষয়ে রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-১) বেগম তানজিলা খানম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ২০১০ ও ২০১৬ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সর্বশেষ ২০১৬ সালে দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো বিশেষ রং লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু বাহ্যিক দৃষ্টিতে তো কোনো ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা যায় না। এর পরও রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের মাধ্যমে রং দিয়ে চিহ্নিত করার কথা ছিল। তবে এর অগ্রগতি সম্পর্কে জানা নেই।’ রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় বর্তমানে ১০-১২ লাখ ভবন রয়েছে। এর বেশির ভাগই যথাযথ আইন মেনে নির্মিত হয়নি। কিন্তু নানা জটিলতায় ইচ্ছে থাকলে এসব ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না সংস্থাটি। জানা যায়, রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রার ভূমিকম্পকে মাঝারি এবং এর চেয়ে বেশি মাত্রাকে শক্তিশালী বা তীব্র ভূমিকম্প হিসেবে ধরা হয়। জাতিসংঘ ভূমিকম্পের দুর্যোগ ঝুঁকিসূচক অনুসারে, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ইরানের রাজধানী তেহরান। আর বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। গত ১৫০ বছরে বিশ্বে সাতটি বড় আকারের ভূমিকম্প হয়, এর মধ্যে দুটির কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশে। ১৯১৮ সালের ৮ জুলাই ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সিলেটের শ্রীমঙ্গল। ১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাই একই মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল মানিকগঞ্জ। আরও কয়েকটি ভূমিকম্পের কেন্দ্র বাংলাদেশ না হলেও তা ধ্বংসচিহ্ন রেখে যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভারতের শিলংয়ের ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প। তবে সে সময় বহুতল ভবন না থাকায় তেমন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, দেশে ৯টি বড় শহর বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। শহরগুলো হলো- ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী ও দিনাজপুর।

সর্বশেষ খবর