বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ৪৭

জয়পুরহাটে চার নদীতে চাষাবাদ

মাজেদ রহমান, জয়পুরহাট

জয়পুরহাটে চার নদীতে চাষাবাদ

জয়পুরহাটের চার নদীই এখন মরা খাল। নদীর বুকে পলি জমে এগুলো ভিটেমাটিতে পরিণত হয়েছে। এ চার নদী হচ্ছে ছোট যমুনা, হারাবতী, তুলসীগঙ্গা ও চিরিনদী। এসব নদীর নাব্য হারিয়েছে প্রায় বছর ২০ আগে। নেই নদীশাসন, খনন, সীমানা নির্ধারণ। যে যার মতো দখল করে নিয়েছে। কেউ বাড়িঘর করেছে, কেউবা করেছে কৃষিজমি। এসব দেখার কেউ নেই। ছোট যমুনায় একসময় পালতোলা নৌকা চলত। নৌকায় করে ব্যবসায়ীদের সাংসারিক বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করার দৃশ্য দেখা যেত। সকাল, দুপুর, বিকালে জেলেদের কোলাহলে মুখরিত থাকত নদীর দুই পাড়। সেই ছোট যমুনা নদী এখন মরা খাল। কোনো কোনো জায়গায় আবার খুঁজেই পাওয়া যাবে না নদীর কোনো অস্তিত্ব। নাব্য হারিয়ে একসময়ের প্রমত্তা ছোট যমুনার অস্তিত্ব এখন বিলীন হতে বসেছে। এখন নদীতে চাষ হচ্ছে ইরি-বোরো ধানসহ অন্য ফসল। দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে উৎপত্তি হওয়া এ নদী ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর ঘুরে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নওগাঁর আত্রাই নদীতে মিশেছে। শুধু       ছোট যমুনা নয়, জয়পুরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে চলা তুলসীগঙ্গা, হারাবতী ও চিরিনদীর একই দশা। ভারতে জন্ম নেওয়া চিরিনদী পাঁচবিবি উপজেলার কল্যাণপুর থেকে শুরু করে আক্কেলপুর পর্যন্ত ৫৮ কিলোমিটার। এর ৩০ কিলোমিটারে মিলবে না নদীর কোনো চিহ্ন। দখল হয়ে গেছে এ নদী। বর্ষার সময় যৎসামান্য পানি এ নদীতে এলেও দখলের কারণে নদীটি গতিপথ হারিয়েছে। বাকি ২৮ কিলোমিটার নদীর কিছু চিহ্ন চোখে পড়লেও তলদেশ ভরাট হওয়ায় কোনো পানি নেই। এগুলোও এখন দখলের পর্যায়ে। এ নদীতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। তুলসীগঙ্গা ও হারাবতী নদী দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে প্রথমে ছোট যমুনা, পরে নওগাঁর আত্রাই নদীতে মিলিত হয়েছে। এ নদী দুটিতে বর্ষা মৌসুমে পানি পাওয়া গেলেও খরা মৌসুমে কোনো পানি থাকছে না। দীর্ঘদিন ধরে খনন এবং পাড় না বাঁধায় নদীগুলো একদিকে বেদখল হচ্ছে, অন্যদিকে নাব্য হারিয়ে অতীত ঐতিহ্য হারাচ্ছে। এ চারটি নদীর দৈন্যদশায় জেলায় বেকার হয়ে পড়েছে শতাধিক জেলে পরিবার। এখন তারা বাপ-দাদার আদি পেশা ছেড়ে ভ্যান-রিকশা চালাচ্ছেন। সদর উপজেলার দোয়ানী গ্রামের দীনেশ চন্দ্র বলেন, ‘আগে বাবার সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতাম। এখন নদীতে পানি না থাকায় ভ্যান চালাই।’ দীনেশের মতো দোয়ানী গ্রামের সুবীর চন্দ্র, উত্তর জয়পুর গ্রামের সায়েম হোসেনও একই কথা বললেন। তারা চান মাছ ধরার পেশাকেই বেছে নিতে। তাদের দাবি, খনন করে আবারও নদীকে তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক। জয়পুরহাটে বেলার প্রতিনিধি অপূর্ব সরকার বলেন, ‘নদীগুলোর অবৈধ দখল উচ্ছেদ অতি জরুরি। যদি এ অবস্থা চলতে থাকে তবে কিছুদিন পর কোনো নদীরই অস্তিত্ব থাকবে না।’

জয়পুরহাটে পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী জানান, ‘জয়পুরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে চলা চারটি নদী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১২৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে মার্চের প্রথম সপ্তাহে। কাজ শুরু হলে নদীগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

সর্বশেষ খবর