বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
রাজউকের অভিযান

দেড় শতাধিক ভবনের তথ্য সংগ্রহ, নোটিস

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বহুতল ভবনগুলোর অনিয়ম ও ত্রুটি খুঁজে বের করতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান চালায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ২৪টি পরিদর্শক দল। এদিন প্রায় দেড়শ ভবনের তথ্য সংগ্রহ করেছেন পরিদর্শনকারীরা। এ সময় অসংখ্য বহুতল ভবনে অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। মানা হয়নি নকশা। নেই জরুরি বহির্গমন পথ বা অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। পরিদর্শন- কারীরা অনিয়ম চিহ্নিত করে মালিকপক্ষকে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শুধরে নিতে নির্দেশ দেন। চিহ্নিত ত্রুটি সমাধান না করলে পরবর্তীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাজউক। একই দিনে সদরঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫৩টি স্থাপনাকে অতিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল সন্ধ্যায় রাজউকের জোন-৩ (সাভার, মিরপুর) এর অথরাইজড অফিসার মোবারক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৃষ্টির কারণে পরিদর্শনে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। তারপরও আমাদের ৭টি টিম ৭৫টি ভবনের তথ্য সংগ্রহ করেছে। টিমগুলো এখনো মাঠে আছে। ফোনে যতটুকু জেনেছি, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভবনে ত্রুটি পাওয়া গেছে। জোন-৭ (কেরানীগঞ্জ, জুরাইন, সূত্রাপুর, ওয়ারী) এর অথরাইজড অফিসার নূর আলম বলেন, আমরা আজ ১১টি ভবনের তথ্য সংগ্রহ করেছি। যেসব ভবনে ত্রুটি পাওয়া গেছে সেগুলোর মালিকপক্ষকে শুধরানোর নোটিস দিয়েছি। ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময় থাকলেও চেষ্টা করছি আগামী শনিবারের মধ্যে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করতে। এরপর এগুলোর সারসংক্ষেপ তৈরি করব। পরবর্তীতে রাজউক চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে তা প্রকাশ করবেন। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ১৫ দিনব্যাপী অভিযানে রাজধানীর ১০ তলার ওপরের বহুতল ভবনগুলোর নকশা,  বেজমেন্ট, কার পার্কিং, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি বহির্গমন সিঁড়িসহ নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন রাজউক কর্মকর্তারা। পরে এসব তথ্য প্রতিবেদন আকারে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে এবং পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে। রাজউকের ৮টি জোনের অধীনে আশুলিয়া, ধামসোনা, উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, মিরপুর, গুলশান, বনানী, মহাখালী, পূর্বাচল, ধানমন্ডি, লালবাগ, মতিঝিল, ভুলতা,  কেরানীগঞ্জ, জুরাইন, সূত্রাপুর, ওয়ারী, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁ এলাকায় চলছে এ কার্যক্রম। অভিযানের প্রথম দিনে শতাধিক ভবনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পুরান ঢাকায় ৫৩ ভবন অতিঝুঁকিপূর্ণ : ফায়ার সার্ভিস : রাজউকের পাশাপাশি রাজধানীর স্থাপনাগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে মাঠে নেমেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। গতকাল রাজধানীর সদরঘাট এলাকার ইস্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউশন সুপার মার্কেটসহ ৫৩ ভবনকে অগ্নিনিরাপত্তার জন্য অতিঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। এ ছাড়া ১৭৩ ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এ সময় ইস্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউশন সুপার মার্কেটের সামনে অতিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা সংবলিত একটি ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়। আগের দিন বঙ্গবাজারকে অতিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টাঙিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস। সদরঘাট ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) মোস্তফা মোহসিন বলেন, ইস্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউশন ১৫ তলা সংবলিত একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। এখানে ন্যূনতম অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। এ ব্যাপারে তাদের আগে দুবার চিঠি দিয়েছি, কিন্তু মানা হয়নি। মানুষের জানমালের স্বার্থে আমরা ভবনটিকে অগ্নিনিরাপত্তার জন্য অতিঝুঁকিপূর্ণ বলে  ঘোষণা করেছি। এ ছাড়া সদরঘাট ফায়ার সার্ভিসের আওতায়  মোট ১৭৩টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ৫৩টিকে অতিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। ওয়াহিদ ম্যানশনের দুই মালিক কারাগারে : এদিকে পুরান ঢাকার চকবাজারের চূড়িহাট্টার অগ্নিকান্ডে  হতাহতের মামলায় ওয়াহিদ ম্যানশনের দুই মালিক সোহেল ওরফে শহীদ ও হাসানকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মো. কায়সারুল ইসলাম এ আদেশ দেন।

এর আগে মামলার দুই আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে চকবাজার থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে বলেন, ভবনটি মূলত আবাসিক। কিন্তু আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিকভাবে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করলে প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। সে বিষয় জানার পরও আসামিরা ওই ভবনটিকে গুদাম হিসেবে ভাড়া দেন। এ কারণে আগুনে পুড়ে ৭০ জন লোক মারা গেছেন। বহু লোক আহত হয়েছেন। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতে বলেন, আসামিরা আগুন লাগাননি। ভবনে আগুন লাগায় তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তারা নিজেরাই মারা যেতে পারতেন। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

সর্বশেষ খবর