বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জ ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন

বাজেটের আকার হতে পারে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, এডিপি ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা

মানিক মুনতাসির

চ্যালেঞ্জ ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন-২০১২ বাস্তবায়নই প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে অর্থ বিভাগ। কেননা ব্যবসায়ীদের বিরোধিতা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে মতের অমিলসহ নানা জটিলতায় আইনটি গত সাত বছর বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ২০১৭ সালে বাজেট পাসের আগমুহূর্তে এসে তা দুই বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়। এ বছর ১ জুলাই থেকেই তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অবশেষে ১৫ শতাংশ একক ভ্যাট হারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে তিন স্তরের ভ্যাটব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে নতুন আইনে। এ আইনের প্রতি অভ্যস্ত হতে মানুষের কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ নতুন একটি পদ্ধতিতে ঢুকতে হবে। এজন্য প্রথম বছর হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আইনটি বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের হবে বলে মনে করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সেই সঙ্গে এনবিআরের পক্ষ থেকেও এ চ্যালেঞ্জের কথাই ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। কেননা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করায় বাজেটে স্বনির্ভরতা বাড়ছে। এতে বৈদেশিক সহায়তা ধীরে ধীরে কমবে। আগামী বছরের বাজেটেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। যে কোনো দেশের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। অথচ আমাদের মাত্র ১০ শতাংশ। এজন্য সবাইকেই ভ্যাট দিতে হবে। নতুন ভ্যাট আইনে ভ্যাটের স্তর হবে তিনটি, যা ৫, সাড়ে ৭ ও ১০ শতাংশ। তবে মোবাইল ফোনে কথা বলা, গ্যাস ও সিগারেট এসব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল থাকবে। এর জন্য আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি থাকবে। তবে কাউকে কষ্ট দিয়ে ভ্যাট কিংবা রাজস্ব আদায় করা হবে না। কোনো ব্যবসায়ীকে ভ্যাটের জন্য হয়রানি করা হবে না। কেননা বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার।’ এদিকে অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, এবারের বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নকে। ‘শহর হবে গ্রাম’- এই থিমের ওপর বাজেট প্রস্তুতের কাজ করছে সরকার। তবে পাশাপাশি আরও পাঁচটি খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে এবারের বাজেটে। এগুলো হলো বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, উন্নয়ন কর্মকা  চলমান রাখা, রপ্তানির নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করা এবং কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন অব্যাহত রাখা। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করে এজন্য কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে ২০২৪ সালের আগেই দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্য থাকছে এবারের বাজেটে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২১ সালের আগেই দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ২ অঙ্কে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এজন্য তিন বছর মেয়াদি আগাম বাজেট পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মানবসম্পদ উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ গত অর্থবছর ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি বছর ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ অর্জন হবে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আভাস দিয়েছে। আর ২০২১ সালের মধ্যেই জিডিপির এ হার ২ অঙ্কে উন্নীত হবে বলে আশা করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

এবারের বাজেটের মোট আকার হতে পারে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার। যদিও সংশোধিত বাজেটে তা থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নতুন বাজেটে সম্ভাব্য রাজস্বের লক্ষ্য ধরা হবে ৩ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। তবে বরাবরের মতো ৫ শতাংশ ঘাটতি ধরে এ বাজেট প্রণয়ন করা হবে। এর মধ্যে দেড় লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে, যা এনবিআরের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এ ছাড়া নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রাথমিকভাবে বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এডিপির আকার ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ বলছে, চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগসহ বেশির ভাগ বৃহৎ প্রকল্পের কাজ দু-এক বছরের মধ্যে শেষ হবে। ফলে এডিপিতে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি বরাদ্দের প্রয়োজন হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন অবশ্য সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এখন এর কোনো বিকল্পও নেই। রাজস্ব বাড়াতে হলে এ আইনটি বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যদিকে সামনের দিনগুলো বাংলাদেশের জন্য শুধুই উন্নয়নের হবে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর