বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
মিরেরসরাই প্রজেক্টসহ ৬৫ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন

রোজায় দ্রব্যমূল্য যেন না বাড়ে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিরেরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীসহ দেশব্যাপী ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন এবং ১৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনসহ ৬৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত থেকে মিরেরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন, মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সিটি ইকোনমিক জোন, সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণ, উপকারভোগী এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।

এ সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন। এর আগে প্রকল্পগুলোর একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। 

আসন্ন রমজানে চিনি ও ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি না করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিটি ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী রোজায় চিনি, ডাল, ছোলার সমস্যা যেন না হয়। রমজানে দাম যেন বৃদ্ধি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আপনাদের সবার প্রতি এটা আমার অনুরোধ। মানুষের যেন কষ্ট না হয়। এর আগে মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও একই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। 

ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না : চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে’ স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিল্পায়ন ছাড়া কোনো দেশ উন্নতি করতে পারে না। আমাদের শিল্পায়ন যেমন প্রয়োজন, তেমনি কৃষি জমিও লাগবে। শিল্পায়ন কোথায় হবে সেগুলো আমরা ঠিক করে দেব। মিরেরসরাই ইকোনমিক জোন চরাঞ্চলে হচ্ছে। সেখানে কোনো ফসলি জমি নেওয়া হয়নি। ভবিষ্যতেও কোনো কার্যক্রমে ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দা থাকলেও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যখন যা প্রয়োজন আমরা তা করার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের অর্থনীতি সবসময় গতিশীল। এটাকে গতিশীল রাখতে হবে। সুষ্ঠু পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ ছাড়া, দুর্যোগে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সে সময় যেন খাদ্য মজুদ থাকে সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশিরা যেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে, সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে সরকার। এর ফলে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে তরুণদের বেকারত্ব অনেকটাই দূর হবে।

যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ সঙ্গে সঙ্গে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের জমির তিনগুণ দাম দেওয়া হচ্ছে। আর তারা টাকা তো পাবেই, তাদের বিকল্প জায়গার ব্যবস্থাও করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। পাশাপাশি তাদের ছেলেমেয়েকে ওইসব ইকোনমিক জোনের কোম্পানি-কারখানায় চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ করছি। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের সঞ্চালনায় মিরেরসরাই প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ফেনীর সংসদ সদস্য লে. জে. (অব.) মাসউদ উদ্দিন চৌধুরী। এ সময় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান, ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশিরা যেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে, সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে সরকার। এর ফলে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে তরুণদের বেকারত্ব অনেকটাই দূর হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের তরুণ সমাজ দেশে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে আমি তাদের উদ্যোগের প্রশংসা করি। উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টির জন্য আমি কেবল রপ্তানির ওপর নির্ভর করতে পারি না, দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যেন বাড়ে এবং দেশে যেন আমাদের বাজার সৃষ্টি হয় সে পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করে আমরা সারা দেশে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। এর ফলে এখন ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে সব কিছু ঘরে বসেই মানুষ অনলাইনে সারতে পারছে।

এ সময় আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারে তার সরকারের বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) এবং বিসিআইএন-ইসি (বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার) পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানটা এমন চমৎকার একটা জায়গায় যেখান থেকে প্রয়োজনে পূর্ব-পশ্চিম এবং উত্তর-দক্ষিণ- সবখানেই যাওয়া যায়। এসব জায়গাতেই একটি ভালো বাজার পাওয়ার সুযোগ আমাদের রয়েছে। সে যোগাযোগটাও আমরা স্থাপন করেছি।

সারা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে আমি ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। আজকে আরও ১১টি করা হলো এবং ১৩টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হলো। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য সাহস করে যারা বাংলাদেশে এসেছেন তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। আমি মনে করি এটা আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে।

কোর্টের রায় বাস্তবায়ন প্রয়োজন : বিজিএমইএর নতুন ভবন উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কাওরানবাজারে বিজিএমইএ ভবনটির অনুমোদন আমরাই দিয়েছিলাম। কিন্তু তা কোনোভাবেই হাতিরঝিলে নয়। আমরা ভবনটির অনুমোদন দিয়েছিলাম সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন জায়গায়। কিন্তু আমরা ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরই কীভাবে জানি ব্রিজ তৈরি করে এটিকে হাতিরঝিলে নিয়ে যাওয়া হয়। যার ফলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। নতুন ভবনের উদ্বোধন হওয়ায় এ সংকট কেটে গেল। কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবনটা ভেঙে ফেলতে হবে। আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা একান্ত প্রয়োজন। গতকাল বিজিএমইএর নতুন ভবন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর উত্তরার ১৭ নং সেক্টরের ব্লক এইচ ওয়ানে নির্মাণাধীন বিজিএমইএ কমপ্লেক্স ভবনের নিচতলায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। 

নতুন পণ্যের নতুন বাজার খুঁজতে রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানের কূটনীতি কিন্তু অর্থনৈতিক কূটনীতি। প্রতিটি দূতাবাসকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। প্রতিটি রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় ঢেকে দীর্ঘ মিটিং করেছি, কোন দেশে বাংলাদেশের কোন কোন পণ্যের বাজার রয়েছে তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, গত ১০ বছরে পোশাক খাতের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করেছি। মালিকদের জন্য উৎস কর ছাড় দিয়েছি। বাজেটে কর বসাতে পারি না, কিন্তু কমাতে পারি। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়াতে সাহায্য করায় বিজিএমইএকে এ সময় ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

গণভবনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। উত্তরার নতুন ভবনে এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, প্রথম সহ-সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু, সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, বিইউএফটির ভাইস চ্যান্সেলর মোজাফফর ইউ সিদ্দিকী, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হকসহ সংগঠনটির বিভিন্ন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর