শিরোনাম
শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোগী নয়, অপহরণকারী

মির্জা মেহেদী তমাল

রোগী নয়, অপহরণকারী

ডা. মোনায়েমুল বাশার। বয়স ৪০। পেশায় হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরে তার চেম্বার। প্রতিদিন তিনি রোগী দেখেন। ভালো ডাক্তার হিসেবে তার নামডাক রয়েছে। সেদিন সানু আক্তার নামে একজন রোগী আসেন তার কাছে। মোনায়েম তাকে দেখে ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেন। কিছু দিন পর ডা. মোনায়েমের কাছে ফোন আসে। বিভিন্ন নারীর ফোন। তারা প্রত্যেকে সানু আক্তারের রেফারেন্সে কথা বলেন। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলতে থাকে। সানু আক্তারও তার কাছে ফোন করেন। মোনায়েম সানুর সঙ্গে কথা বলতে থাকেন দিনের পর দিন। একসময় সানু তাকে বলেন, আপনি একদিন আমাদের এখানে আসেন। আপনি খুব ভালো ডাক্তার। আমার পরিচিত মহিলারা আপনার কাছে চিকিৎসা করাতে চাচ্ছে। এমন অনুরোধের পর মোনায়েম তাদের ওখানে যেতে রাজি হন। দুই দিন আগে মোনায়েম সানুর কথামতো তাদের টাঙ্গাইলের মধুপুরে যেতে রওনা হন। মধুপুরে গিয়ে সানুর সঙ্গে দেখা করেন। সানু তাকে মধুপুরের ভাওয়াল বনে নিয়ে যান। গহিন জঙ্গলের ভিতরে মোনায়েমকে এক বাসায় নিয়ে ওঠে সানু। মোনায়েম দেখতে পান, সেখানে বেশ কয়েকজন পুরুষ বসা। মোনায়েমকে দেখেই জাপটে ধরে ফেলে। বেঁধে মারধর শুরু করে। পাঁচ লাখ টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। মোনায়েম এসময় চিৎকার করে কান্না করতে থাকে। কান্নার শব্দ মোবাইল ফোনে মোনায়েমের পরিবারের সদস্যদের শোনাতে থাকে। মোনায়েম বুঝতে পারে, এরা অপহরণকারী চক্র। মোনায়েমের স্ত্রী ও শ্যালক অপহরণকারীদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে কিছু টাকা পাঠায়। কিন্তু বাকি টাকার জন্য চরমভাবে তাকে নির্যাতন করতে থাকে। ৩ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে তার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। মোনায়েমের পরিবার র‌্যাব-৪ এর সঙ্গে যোগাযোগ করে। র‌্যাব মোনায়েমকে উদ্ধার করতে নানা কৌশল অবলম্বন করে। একপর্যায়ে গতকাল মোনায়েমকে র‌্যাব উদ্ধার করে। গ্রেফতার করে সানুসহ ৬ অপহরণকারীকে। র‌্যাব অপহরণকারীদের জেরা করে জানতে পারে অপহরণের নানা কৌশল। র‌্যাব জানায়, তারা সবাই অপহরণে সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং এলাকায় তাদের চক্রটি সোহরাব বাহিনী হিসেবে পরিচিত। তারা ১০ বছর ধরে বিভিন্ন কৌশলে বড় বড় ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও চাকরিজীবীদের টার্গেট করে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে মহিলাদের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদ ও সুন্দরী আদিবাসী ললনাদের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল। র‌্যাব জানায়, অপহরণ চক্রের মহিলা সদস্য পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে ডাক্তারের চেম্বারে যায়। চিকিৎসা শেষে বিভিন্ন রোগী তার মাধ্যমে চিকিৎসা করাবে বলে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ফোনে যোগাযোগ করতে থাকে ডাক্তারের সঙ্গে। একপর্যায়ে সুন্দরী মহিলাদের প্রলোভন দেখিয়ে তার বাসায় আসতে বলে, ওই স্থানে পৌঁছালে তার বাসায় না নিয়ে ডাক্তারকে জিম্মি করে ভাওয়াল বনে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। র‌্যাব আরও জানতে পেরেছে, আদিবাসী সুন্দরী ললনারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিভিন্ন কৌশলে তাদের মোবাইল নম্বর সংড়ুহ করে মোবাইলে কথা বলার একপর্যায়ে ডলার বিক্রির কথা বলে কৌশলে তাদের এলাকায় নিয়ে জিম্মি করে। পরে ভাওয়াল বনে আটক রেখে মুক্তিপণ আদায় করে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, বিভিন্ন ছদ্মবেশ নিয়ে অপহরণকারী চক্র এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে রাজধানীসহ সারা দেশেই। ডাক্তারের অসচেতনতার কারণে তিনি বড় ধরনের একটি ফাঁদে পড়ে যান। তার জীবন রক্ষা করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় প্রত্যেকেই বিভিন্ন প্রলোভন থেকে দূরে থেকে সচেতন থাকাটা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর