শিরোনাম
শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ওষুধ শিল্পে বিস্ময়কর উত্থান

আগামী বছর চালু হচ্ছে ওষুধ শিল্প পার্ক

রুহুল আমিন রাসেল

ওষুধ শিল্পে বিস্ময়কর উত্থান

বাধার পাহাড় পেরিয়ে বিশ্বের ওষুধ বাজারে বিস্ময়কর প্রসার ঘটেছে বাংলাদেশের। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে একসময় ওষুধ দেয়নি উন্নত বিশ্ব। বিপ্লবের অগ্রযাত্রায় এখন দেশের ৯৮ শতাংশ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ১৬০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। এখন পোশাক শিল্পের মতোই ইউরোপ-আমেরিকার বাজারেও জেঁকে বসেছে বাংলাদেশের ওষুধ।

ওষুধ শিল্পের অগ্রযাত্রার বিষয়ে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির উপদেষ্টা এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল মুক্তাদির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আমরা নিজের চোখে দেখেছি সেই ভঙ্গুর পরিস্থিতি। আলাদাভাবে ক্যাপসুল সেল কিনে এর ভিতরে চীন থেকে আসা পেট্রা-সাইক্লিন পাউডার ভরে বিক্রি করা হতো। এভাবে বারান্দায় বসে তৈরি করা হতো ক্যাপসুল। এসব ওষুধ মানুষ খেত। সেই জায়গা থেকে আজকে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যে, এ দেশে তৈরি ওষুধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। বিশ্বের ৪৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে সবচেয়ে এগিয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের ২৫৭টি কোম্পানির কারখানায় বছরে ২৪ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে। বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ ও কাঁচামাল উৎপাদিত হচ্ছে এসব কারখানায়। এই শিল্পে প্রায় দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করতে আগামী বছর চালু হচ্ছে ওষুধ শিল্প পার্ক। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশীয় ৪৬টি কোম্পানির প্রায় ৩০০ প্রকারের ওষুধ পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি হয়। এবার শুধু ওষুধ রপ্তানিতে বিশ্ববাজার থেকে বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। এখানেই শেষ নয়, ওষুধ শিল্পে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলেছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ওষুধ শিল্পে মেধাস্বত্ব ছাড় ১৭ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প খাতে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত মেধাস্বত্ব ছাড় পাওয়া গেছে। তবে বিশ্ববাজারে ওষুধের এখন বার্ষিক ব্যয় ৯৫ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। দেশের ওষুধ উৎপাদনকারী অনুমোদিত ২০৪টি কোম্পানির ওষুধের বিক্রি ও ধরন নিয়ে জরিপ পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত তথ্যপ্রযুক্তি ও ক্লিনিক্যাল গবেষণার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউভিআইএ। সংস্থাটির জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ওষুধের বাজারের আকার দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ বাজারের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। আর গত বছর দেশে ওষুধের বাজার বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বার্ষিক সাড়ে ১৬ শতাংশ হারে বাড়ছে দেশে ওষুধের বাজার। ২০১৮ সালে ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে এ বাজারের আকার। এর ৬৮ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে শীর্ষ ১০ ওষুধ কোম্পানি। আর যেসব ওষুধের ওপর ভর করে বাজার বড় হচ্ছে, তার প্রথমেই রয়েছে অ্যান্টিআলসারেন্ট বা অ্যাসিডিটির ওষুধ। সর্বাধিক বিক্রি হওয়া ওষুধের তালিকায় এরপরই আছে অ্যান্টিবায়োটিক। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তথ্যমতে, গেল কয়েক বছরে দেশ থেকে ওষুধ রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১১ সালে ওষুধ রপ্তানি হয় ৪২৬ কোটি টাকার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার। যা আগের বছরের চেয়ে ১৬ দশমিক ০৩ শতাংশ বেশি। আরেক তথ্যমতে, ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের আকার ছিল ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে শুধু বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের বাজার ছিল ১৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার। বিসিক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের মধ্যেই শেষ হচ্ছে দেশের প্রথম ওষুধ শিল্প পার্ক অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) স্থাপনের কাজ। যেটি দেশের ওষুধের চাহিদা পূরণ করবে শতভাগ। রাজধানীর অদূরে মেঘনা নদীর পার ঘেঁষে গড়ে ওঠা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দেশের প্রথম ওষুধ শিল্প পার্ক। ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে ২০০৮ সালে সরকার এই শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখানে কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির পক্ষ থেকে মোট ২৭টি কোম্পানির তালিকা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই শিল্পনগরীতে প্রতি একর জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি টাকা। এটা স্থানীয় দরের চেয়ে অনেক বেশি। তবে মালিকরা সবাই আন্তরিক বলেই এরই মধ্যে তারা বরাদ্দ পাওয়া প্লটের দামের একাংশ পরিশোধ করেছেন। আগামী দুই বছরের মধ্যে নতুন শিল্পনগরীতে কাজ শুরু করতে পারবে দেশের ওষুধ কারখানাগুলো।

সর্বশেষ খবর