শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী

চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, হবিগঞ্জ

তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম ভাটিপাড়া। রতœা নদীর অববাহিকার দুই হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত গ্রামটির লোকজনের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। গ্রামের লোকজনের এক সময় মৎস্য আহরণ করেই চলত জীবন-জীবিকা। কিন্তু এখন আর আগের অবস্থা নেই। তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন গ্রামের অন্তত দেড় শতাধিক পরিবার। শুধু ভাটিপাড়া গ্রামেই নয়, অল্প পুঁজিতে ভালো লাভ পাওয়ায় এ পদ্ধতিটি ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলাজুড়ে। জানা যায়, এ পদ্ধতিতে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে এক মাস। প্রথমে ডিমগুলোকে রোদে দিতে হয়। একদিন রোদ লাগার পর সেগুলো সিলিন্ডারে বসানো হয়। এ সিলিন্ডার তৈরি করা হয় ধাড়ি (চাঁচ) দিয়ে। এটি ধানের তুষ দিয়ে পরিপূর্ণ করা হয়। একটি সিলিন্ডারে এক হাজার ডিম রাখা যায়। সিলিন্ডারের পাশে একটি স্থানে তুষে আগুন দিয়ে সিলিন্ডারে তাপ দেওয়া হয়। তিন ঘণ্টা পর পর ডিমগুলো নাড়াচাড়া করতে হয়। এভাবে ২০-২৫ দিন তাপ দেওয়ার পর ডিমগুলো একটি চটে বিছিয়ে রাখতে হয়।

 সেগুলো থেকে বাচ্চা বের হয়। এক দিনের হাঁসের বাচ্চার দাম হয় সাধারণত ২০ থেকে ২৫ টাকা। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ী ও পাইকাররা এখান থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করে থাকেন। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, শুধু ভাটিপাড়া গ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার হাঁসের বাচ্চা বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনকারী রাজেশ চন্দ্র দাস বলেন, ‘তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে ভাটিপাড়া গ্রামের প্রত্যেকটি পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে। মালতি রাণী দাস বলেন, ‘এ কাজের জন্য খুব একটা পরিশ্রম করতে হয় না। মাঝেমধ্যে কাজ করলেই হয়। ডিমগুলো নাড়াচাড়া করা ছাড়া কোনো কাজ নেই। তাই এ কাজ মহিলারাসহ আমাদের ছেলেমেয়েরাও করতে পারে।’ শংকর দাস বলেন, ‘হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে অনেক ভালো আছি। তবে সরকার যদি এ ব্যাপারে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিত এবং সরকারি ঋণ দিত তাহলে আরও ভালো হতো।’ তবে এ ব্যবসার অগ্রগতির জন্য খামারিদের পাশে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সব সময় রয়েছে বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. ইছাক মিয়া। খামারিদের প্রশিক্ষণসহ হাঁসের বাচ্চার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। এ ছাড়া তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর