শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

হারিয়ে যাচ্ছে বিরাট রাজার গড়

গৌতমাশিস গুহ সরকার, গাইবান্ধা

হারিয়ে যাচ্ছে বিরাট রাজার গড়

বিরাট রাজার গড় উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থান। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রাজাহার ইউনিয়নে অবস্থিত এই প্রত্নস্থানটির বেশ কয়েকটি ঢিবি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে সরকারের তালিকায় নথিভুক্ত আছে। কিন্তু কাগজে কলমে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি

হলেও এখন এ ঢিবিগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আর বিরাট রাজার গড়ের বিস্তৃত সীমানা ইতিমধ্যেই দখলদারদের দখলে চলে গেছে। এগুলো সংরক্ষণ ও উদ্ধারে সরকারি দফতরের কোনো উদ্যোগও নেই। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি গবেষক দল এখানে জরিপ পরিচালনা করেন। জরিপে তারা দুটি ঢিবি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দেখতে পান বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় লোকজন মাটি খুঁড়ে নিয়ে যাওয়ার কারণে খ্রি. ১০ম-১১শ শতকে নির্মিত দুটি ব্রাহ্মণ্য মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের অবশেষ অংশটুকুও নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে। দুটি ঢিবির ইট নির্মিত স্থাপত্য-কাঠামোর অবশেষ উন্মোচিত ও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে। জরিপ দলের পক্ষে অধ্যাপক স্বাধীন সেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক (রাজশাহী অঞ্চল) বরাবর প্রতœনিদর্শনগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণের লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। অধ্যাপক স্বাধীন সেন বলেন, নবরথ মন্দিরের মানুষজন ইট খুলে নিয়ে যাওয়ায় একটি পাশ ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্য আরেকটি ঢিবিতে মাটি ও ইট খুলে নিয়ে যাওয়ার কারণে আরেকটি ব্রাহ্মণ্য মন্দিরের ম বের একপাশের দেয়াল উন্মুক্ত হয়ে কাত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বৃহত্তর তৃতীয় ঢিবির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাটি ও ইট তুলে নিয়ে যাওয়ার কারণে মাটির নিচে চাপা পড়া স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ আংশিকভাবে উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধা ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ‘গাইবান্ধার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ নামক বইয়ে খাজা এম এ কাইয়ুমের লেখা থেকে জানা যায় এখানে রাজপ্রাসাদ, ২৭টি দুর্গ, দরবার কক্ষ, রাজমন্দির, অতিথিশালা, নাট্যশালা ইত্যাদি স্থাপনা ছিল যার মাত্র কয়েকটির ঢিবি আকারে এখন রয়েছে। এগুলোও বিলুপ্ত হওয়ার পথে। রাজা বিরাট গড়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এটি দখলদারদের দখলে চলে গেছে।

 নির্মাণ করা হয়েছে ঘর বাড়ি, দোকানপাট, মুরগির খামার, স্কুল ঘর, মসজিদ, জমিতে চলছে চাষাবাদ। পুকুরগুলো দখলে নিয়ে চলছে মাছচাষ। ঘরবাড়ি তৈরির ফলে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঢিবিগুলো। ঢিবির ইট খুলে জায়গা বের করে তৈরি হয়েছে ঘরবাড়ি। মাটির নিচে চাপা পড়া রাজপ্রাসাদের ওপরের দিকের ইট খুলে নেওয়া হয়েছে। ওপরিভাগে চড়ছে গরু-ছাগল। চুলা তৈরি করে স্থানীয়রা ধান সেদ্ধ করছে, খড়ের স্তূপ স্থাপন করে খাওয়ানো হচ্ছে পশুদের। রাজপুরীর চারদিকে বেষ্টন করা পর পর তিনটি গভীর পরিখা ছিল যা বর্তমানে ধান চাষের জমিতে পরিণত হয়েছে। এলাকায় স্থাপিত মদনমোহন জিউ বিগ্রহ মন্দিরের সেবায়েত দীলিপ চক্রবর্তী জানান, রাজা বিরাটের ১৭ একর ২১ শতক জমি নিয়ে হাই কোর্টে মামলা বিচারাধীন আছে। বর্তমানে মন্দিরের দখলে আছে পাঁচ একর জায়গা। সেখানে হাট বসিয়ে প্রণামি আদায় করে মন্দিরের কাজ চালানো হয়। এই সম্পত্তি তারা দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে দাবি করে নিম্ন আদালতের রায় পান কিন্তু সরকার সে রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেছে।

সর্বশেষ খবর