রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাইবার ক্রাইম যাচ্ছে মানি লন্ডারিং আইনে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সাইবার অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে দেশে সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার পর এখন এ ধরনের অপরাধকে আবার মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনেও অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে সরকার। তবে এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিষয়টি আরও পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঘটমান সাইবার অপরাধের ধরন বিশ্লেষণের মাধ্যমে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-কে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে এ সংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সাইবার ক্রাইমের ব্যাপ্তি এত বেশি সম্প্রসারিত হচ্ছে যে, এখন আর নির্দিষ্ট কোনো আইনের মধ্যে এ ধরনের অপরাধকে সীমাবদ্ধ রাখা যাচ্ছে না। ফলে মানি লন্ডারিং আইনেও সাইবার ক্রাইম বা এ জাতীয় অপরাধকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ উঠেছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব এবং মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে দিক নির্দেশনা, নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য সচিব রিজওয়ানুল হুদা বলেন, অপরাধ এখন যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে তা একটি আইনে সীমাবদ্ধ রাখার আর সুযোগ থাকছে না। খুন, হত্যা, রাহাজানি বা কাউকে ব্ল্যাকমেইলিং করে অথবা মুক্তিপণের মাধ্যমে কেউ যদি অর্থ সংগ্রহ করে এবং সেই অর্থ যখন কেউ বৈধ করতে যাবে তখনই সেটি মানি লন্ডারিং অপরাধের আওতায় চলে আসবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কেউ একজন ঘুষ খেয়ে যতক্ষণ টাকা বালিশের নিচে রেখে দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেটি মানি লন্ডারিং নয়। যখনই ওই টাকা বৈধ করতে যাবে তখন সেটি মানি লন্ডারিং হবে। আর মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত বিচার এই আইনেই করা উচিত। এর ফলে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত হবে।’ সূত্র জানায়, বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম মূলত কম্পিউটার বা কম্পিউটার/মোবাইলভিত্তিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে করা অপরাধকে বোঝায়। আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক (চ্যাটরুম, ই-মেল, ক্যামেরা, অডিও, ভিডিও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, নোটিসবোর্ড ও গ্রুপ, এসএমএস, এমএমএস) ইত্যাদি ব্যবহার করে তথ্য পাচার, আর্থিক প্রতারণা, কারও সম্মানহানি, কিংবা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা, যৌন হয়রানি করা, পর্নোগ্রাফি তৈরি, আন্তসীমান্ত অপরাধ, গুপ্তচরবৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধকে বোঝায়। আর এ ধরনের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতেই করা হয় সাইবার নিরাপত্তা আইন। তবে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে ফেলেছে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণার বিষয়টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার হ্যাকিং করে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ থেকে প্রায় ১০ কোটি ডলার চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি স্মরণকালে একটি বড় সাইবার ক্রাইম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর বাইরে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের তথ্য চুরি, এটিএম কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা এবং বিদেশ থেকে দামি পণ্যের পার্সেল বা লটারি পাওয়ার লোভ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বাড়ছে। এসব ঘটনায় মামলা হচ্ছে সাইবার নিরাপত্তা আইনে। কিন্তু এ ধরনের ‘অপরাধলব্ধ আয়’ যাতে কেউ ব্যবহারের সুযোগ না পায় সে কারণেই মানি লন্ডারিং আইনে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সাইবার অপরাধ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের এডিসি নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাইবার অপরাধ এবং মানি লন্ডারিং অপরাধ দুটো ভিন্ন বিষয়। একটির সঙ্গে আরেকটি মেলানোর সুযোগ নেই। তবে অপরাধের ধরন বিবেচনা করে একই ঘটনায় দুই আইনে মামলা হতে পারে। সাইবার অপরাধের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হলে তখন মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় আমলে আসবে অপরাধ।

সর্বশেষ খবর