রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

নিষ্পত্তি হয় না চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

মাহবুব মমতাজী

আজ বিশ্বস্বাস্থ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সমতা ও সংহতি নির্ভর সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’। এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কর্নার’ স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। দিবসটি পালনে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এদিকে আমাদের দেশে সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা অত্যন্ত কম। মোটেই সন্তোষজনক নয়। সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার প্রতি এক ধরনের আস্থাহীনতা রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই সামর্থ্যবান রোগীরা চিকিৎসা নিতে ছুটে যান পার্শ্ববর্তী দেশে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসায় মোটামুটি সন্তুষ্ট হলেও রোগীদের বড় অভিযোগ চিকিৎসকের অনুপস্থিতি এবং ক্ষেত্র বিশেষে অবহেলা। সরকারি হাসপাতালে কিছুটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা মিললেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে তা নেই বললেই চলে। কিংবা থাকলেও তা উচ্চমূল্য। সরকারি-বেসরকারি নির্বিশেষে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ করে থাকেন ভুক্তভোগী সাধারণ রোগীরা। এদের মধ্যে অনেকেই নানান ভোগান্তির আশঙ্কায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার উদ্যোগ নেন না। কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ফল পাওয়া যায় না। চিকিৎসা পেশার অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএমডিসিতে কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে তা নিষ্পত্তিতে ধীরগতি নিরুৎসাহিত করছে ভুক্তভোগী রোগীদের। অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি না হলে সমতার ভিত্তিতে কতটুকু স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে- তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ভোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের মনে। চিকিৎসকদের পেশা চর্চার অনুমতি দেয় বিএমডিসি। অসদাচরণ, অবহেলা বা ভুলের কারণে রোগীর ক্ষতি হলে সেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এমনকি নিবন্ধন বাতিল করতে পারে বিএমডিসি। জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র দুজন চিকিৎসকের নিবন্ধন বাতিল করেছে এই প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৩ পর্যন্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলা ও ভুলের কত অভিযোগ জমা পড়েছে তার হিসাব বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) নেই। বিএমডিসিতে অভিযোগের হিসাব রাখা হয়েছে ২০০৪ সাল থেকে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৮৭টি অভিযোগের হিসাব আছে তাদের কাছে। এ সময় মাত্র ছয়টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করেছে সংস্থাটি। ভুল চিকিৎসার অভিযোগের যেসব তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে নিষ্পত্তি হয়েছে, এর মধ্যে- কিছু চিকিৎসকের ছয় মাস থেকে এক বছরের জন্য নিবন্ধন স্থগিত এবং কোনো কোনো ঘটনায় আর্থিক ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছে। বিএমডিসি তথ্যানুযায়ী, ২০১৭-২০১৮ সালে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ৫১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারির অভিযোগে ডা. সাদিকুর রহমানের নিবন্ধন তিন বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ছিল। একই বছরের ৪ জানুয়ারি শিশু ডেলিভারিতে ভুল করায় শাহাবুদ্দিন মেডিকেলের ডা. রোদিয়ার নিবন্ধন ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। ২৫ জুলাই শিশুকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া এবং ভুল পদ্ধতিতে ডেলিভারি করার অভিযোগ উঠে একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। পরে সেটি ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণে সমঝোতা হয়ে যায়। ১০ জুলাই ভুল চিকিৎসার অভিযোগের জন্য রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাজমুল হকের নিবন্ধন ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। ১৯ নভেম্বর নাদিয়া হক নামে এক নারীর ভাঙা হাতে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠে রাজশাহীর একটি ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে। সেটি পরে ৫ লাখ টাকায় সমঝোতা হয়ে যায়। তার আগে ১৯ জুলাই রাজশাহীর আরেকটি ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. খন্দকার গোলাম মো. কবিরের বিরুদ্ধেও অভিযোগ পাওয়া যায়। সেটিও ৪ লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব এ প্রতিবেদককে বলেন, স্বাস্থ্যসেবা পেতে সাধারণ মানুষ পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিএমডিসি নৈতিক ব্যবস্থা নিতে পারলেও ফৌজদারি অপরাধের ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা নেই। অনেক অভিযোগ অস্বচ্ছ পদ্ধতিতেও নিষ্পতি হয়। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে এবং চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বচ্ছভাবে নিষ্পত্তির জন্য সরকারকে স্বাস্থ্য খাত নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।

সর্বশেষ খবর