সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

কনটেইনার যাবে উড়াল পথে

চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করবে যুক্তরাষ্ট্রের ঈগল রেল

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার স্থানান্তর হবে উড়াল পথে। বন্দরের জট কমাতে মাটির ওপরে শূন্যে ‘কনটেইনার ট্রান্সপোর্ট ট্র্যাক’ স্থাপন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ঈগল রেল। কনভেয়ার বেল্টের মতো এই ট্র্যাক মাটির ওপর দিয়ে কনটেইনার নিয়ে যাবে গন্তব্যে। এর ফলে বন্দরে কনটেইনার পরিবহনের গতি অন্তত ১৫ গুণ বাড়বে বলে আশা করছে মার্কিন কোম্পানিটি।

আমেরিকার এই কোম্পানিটি বলছে, তারা বিশ্বের উন্নত বন্দরগুলোতে এ প্রযুক্তি সুবিধা স্থাপন করছে। অনেকটা ক্যাবল কারের মতো করে অন্তত চল্লিশ-পঞ্চাশ ফুট মাটির ওপরে স্টিল স্ট্রাকচারের ট্র্যাক স্থাপন করা হবে, যা দিয়ে কনটেইনার স্থানান্তর করা হবে। এর ফলে আর বন্দরে মালবাহী ট্রাক আসা-যাওয়ার দরকার পড়বে না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই কোম্পানিটি সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরে এ ধরনের অবকাঠামো সুবিধা স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছে। ওই চিঠিতে তারা তাদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকেও যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানিয়েছে।

কোম্পানিটি বলছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে প্রচলিত পদ্ধতিতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ টিইইউএস কনটেইনার মুভমেন্ট করা যায়। তাদের সুবিধা ব্যবহার করা হলে ঘণ্টায় তিনশ টিইইউএস কনটেইনার মুভমেন্ট করা যাবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা মার্কিন কনটেইনার লজিস্টিক কোম্পানি ঈগল রেলের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব পেয়েছি। তারা কনটেইনার পরিবহনে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে চায়। কোম্পানিটি বলছে, এর ফলে বন্দর থেকে আর ট্রাকে করে কনটেইনার পরিবহনের প্রয়োজন পড়বে না। তারাই বে-টার্মিনালে কনটেইনার নিয়ে যাবে। এতে বন্দরের জট অনেকটা হ্রাস পাবে। সূত্র জানায়, আমেরিকান কোম্পানি ‘ঈগল রেল’ এর কয়েকজন কর্মকর্তা এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করে  গেছেন। তারা কনটেইনার ট্রান্সপোর্ট ট্র্র্যাক স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন। কোম্পানিটি প্রাথমিকভাবে বন্দরের ইয়ার্ড থেকে বে-টার্মিনাল পর্যন্ত ঈগল রেলের দুটি ট্র্যাক স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। এই দুটি ট্র্যাক দিয়ে বন্দরের কনটেইনার বে-টার্মিনালের ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। ওখান থেকে সারা দেশে কনটেইনার সরবরাহ করা হবে। কনটেইনার পরিবহনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় বিশ্বের ১০০টি প্রধান বন্দরের ৭০তম স্থানে রয়েছে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রায় ২৯ লাখ ৪ হাজার টিইইউ কনটেইনার পরিবহন হয়েছে, যা বন্দরের ইতিহাসে রেকর্ড। ২০১৭ সালের চেয়ে গত বছরে কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত এক দশকে চট্টগ্রাম বন্দরের সেবার মানের তুলনা করে দেখা যায়, ২০০৮ সালে বন্দরে জাহাজ আসার পর জেটিতে ভিড়তে সময় লাগত গড়ে সাড়ে ১১ ঘণ্টা। ২০১৭ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০৪ ঘণ্টায়। অর্থাৎ জাহাজ আসার পর পণ্য হাতে পেতে এক দশক আগের চেয়ে ৯২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এক দশক আগের মূল অবকাঠামো ব্যবহার করে কনটেইনার পরিবহন করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে পণ্য হাতে পেতে সময় লাগছে। আর কনটেইনার স্থানান্তরে সময় বেশি লাগায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে জাহাজের জটও স্থায়ী রূপ নিয়েছে বন্দরে। জট কমাতে স্বয়ংক্রিয় কনটেইনার অপারেশন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সিটিএমএস এবং জাহাজ যাতায়াত ও বহির্নোঙরে অবস্থানকালে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে আধুনিক ভিটিএমআইএস চালু করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে বন্দরের সক্ষমতাও কিছুটা বেড়েছে। তবে এই সক্ষমতা দিয়ে ভবিষ্যতের কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অবশ্য জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও বে-টার্মিনাল নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে সরকার। এসব অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দরের পূর্ণাঙ্গ সুফল পাওয়া যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর