সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

মোদি-মমতার বাগ্যুদ্ধে জমজমাট পশ্চিমবঙ্গ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মোদি-মমতার বাগ্যুদ্ধে জমজমাট পশ্চিমবঙ্গ

এক সপ্তাহের মধ্যে ফের পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত বুধবার দুপুরে শিলিগুড়িতে প্রচারণায় এসে মমতাকে ‘স্পিড- ব্রেকার’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মোদি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কোচবিহারের দিনহাটা থেকে তার জবাব দিয়েছিলেন মমতা। ওই সভার চার দিনের মাথায় গতকাল সকালে কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে জনসভায় উপস্থিত মোদি। ভিড়ে ঠাসা সভা থেকে কখনো তৃণমূল কখনো আবার মমতার বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী। সকালে মোদির বক্তব্যের পরই দুপুরে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি এবং বিকালে ফালাকাটায় দুটি জনসভা থেকেই পাল্টা আক্রমণ শানালেন মমতাও।

কোচবিহারের জনসভায় মোদি বলেন, ‘দিদির ওপর আপনারা খুব ভরসা করেছিলেন কিন্তু উনি সেই ভরসা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন। কিন্তু পিসি-ভাইপোর জুড়ি এরাজ্যকে অনুপ্রবেশকারী, গু াবাজ, তোলাবাজদের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন। মা-মাটি-মানুষের স্লোগানই বদলে দিয়েছেন তারা।  কেন্দ্রের সব প্রকল্পেই স্পিড ব্রেকার দিদি বাধা দিচ্ছেন। দিদি যদি এসব কাজে বাধা না দিতেন তবে রাজ্যের মানুষ অনেক সুবিধা পেতেন।’

‘সারদা-নারদা-রোজভ্যালি’ আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করে মোদি বলেন ‘মা সারদা কে গোটা দেশ পুজো করে আর দিদি করেন সারদা কেলেঙ্কারি। ‘রোজ’ বললে ফুলের কথা মনে হয় কিন্তু এ রাজ্যে গরিবরা রোজের কথা শুনলেই কাটার ভয় পায়। নারদ মুনি ত্রিলোকে ঈশ্বর নারায়ণের জপ করত কিন্তু এই বাংলায় এরা নারদাকে কেলেঙ্কারির সঙ্গে জুড়ে ফেলেছে। রাজ্যের মানুষদের জীবনভর উপার্জনের রুপি লুট করেছে। যাদের পকেটে এসব রুপি গিয়েছে তাদের খুঁজে বের করবে এই চৌকিদার।’ ময়নাগুড়ির জনসভা থেকে মমতার পাল্টা অভিযোগ মোদিবাবুই সারদা-নারদাতে অভিযুক্তদের সঙ্গে বৈঠক করছে। একসময়ের তৃণমূলের নম্বর টু ‘মুকুল রায়’এর নাম না নিয়েই মোদিকে উদ্দেশ করে মমতার অভিযোগ, ‘যে লোকটা আপনার সামনে দাঁড়িয়ে বৈঠক নিয়ন্ত্রণ করছে, সারদা-নারদায় অভিযুক্ত সবচেয়ে বড় গাদ্দার...আপনার দলের নেতা...তাকে পাশে নিয়ে আপনি বৈঠক করছেন আর তৃণমূলকে দোষ দিচ্ছেন? আপনাদের নেতাই সারদা-নারদার নেতা, তৃণমূল নয়। তৃণমূল না খেতে পারে কিন্তু মানুষের রুপি নিয়ে ধোকা দেয় না।’ জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ও নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল-নিয়ে মমতা বাধা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মমতার পাল্টা জবাব ক্ষমতা থাকলে বাংলায় এনআরসি করে দেখাক। বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন ‘ওরা বলছে বাংলাতে এনআরসি করব-আমরা বলছি গায়ে হাত দিয়ে দেখ, বাংলার মাটিকে ছুঁয়ে দেখ, অত সহজ নয়...ঢুকিয়ে দেব একদম! যেখানে হ্যাঙ্গারের তলায় মিটিং করছ সেখানে ঢুকিয়ে দেব।’ ভিড়ে ঠাসা দর্শকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আপনারা যত আমাকে ভালো বাসছেন ততই পশ্চিমবঙ্গের স্পিড-ব্রেকার দিদির ঘুম উড়েছে। আর রাগ দেখাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের ওপর। রাজনীতিতে জনসমর্থন চলে গেলে কি অবস্থা হয়-তা দিদির রাগ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। আমাকে যেভাবে আজকাল গালি দিচ্ছে-তাতেই বোঝা যাচ্ছে দিদি কত ভয় পেয়েছেন।’ পাল্টা জবাবে মমতা বলেন, ‘দিদি ভয় পাওয়ার লোক নয়। দিদি পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করে, বন্দুকের সামনে লড়াই করে। আপনাদের মতো ডাকাতদের দিদি ভয় পায় না-এটা মাথায় রাখবেন। বরং উনি হারবেন বলে এখন হারাতঙ্ক রোগে ভুগছেন। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, অন্ধ্র গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, কর্নাটক, কেরল, উড়িষ্যা, বাংলা-সব জায়গায় হারবেন।’ দুজন কর্মকর্তাকে সরিয়ে ভোটে রাখা যাবে না বলেও পরিষ্কার জানিয়ে দেন মমতা। ময়নাগুড়ির সভা থেকে মমতা বলেন ‘ভাবছেন দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়ে নির্বাচনে জিতবেন, ওই গুড়ে বালি। সব কর্মকর্তাই আমাদের-এটা জেনে রাখবেন। অত সস্তা নয়। আপনি যখন ক্ষমতায় থাকবেন না, তখন আপনাকে লোক ছুড়ে ফেলে দেবে।’ মমতার বিরুদ্ধে দেশবিরোধী আখ্যা দিয়ে নরেন্দ্র  মোদি বলেন যারা দেশে দুজন প্রধানমন্ত্রী চাইছেন মমতা তাদেরই পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও এনসিপি নেতা ওমর আবদুল্লার এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে এদিন রাসমেলার ময়দান থেকে মমতাকে তোপ দাগেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দিদি আজ এমন লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করছেন যারা ভারতে দুজন প্রধানমন্ত্রী চাইছেন। এটা কী হওয়া উচিত? প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের জমি সমস্যা (ছিটমহল সমস্যা)  ছিল কিন্তু এই সমস্যা যে কোনোদিন মিটবে-তা ভাবা অসম্ভব ছিল কিন্তু আজ সেটা সম্ভব হয়েছে। সন্ত্রাসবাদীদের ঘরে ঢুকে তাদের মারা হবে সেটা ভাবাও অসম্ভব ছিল কিন্তু এখন সবই সম্ভব হয়েছে। আর এগুলো সম্ভব করেছে বিজেপিকে দেওয়া আপনাদের ভোট।’ মোদি আরও জানান, ‘ভারত শক্তিশালী হওয়াতে কয়েকজনের অসুবিধা হচ্ছে। ভারত যখন মহাকাশে শক্তিশালী হচ্ছে দিদির খুব কষ্ট হচ্ছে। ভারত যখন সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে তখনও দিদির কষ্ট হচ্ছে। দিদি এখনই অসুবিধায় পড়েছেন যে সারা দিন উনি এখন মোদি হটাও, মোদি হটাও করছে।’ অন্যদিকে ময়নাগুড়ি ও ফালাকাটার জোড়া সভা থেকে মমতা পাল্টা বলেছেন, ‘আমরা জওয়ানদের শ্রদ্ধা করি। কিন্তু বিজেপি জওয়ানদের নিয়ে রাজনীতি করছে। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’ আর মমতা জানান, ‘এবারের নির্বাচন বিজেপিকে পাল্টে দেওয়ার নির্বাচন। এবার দিল্লিতে বাংলাই সরকার গড়বে। তাই রাজ্যের ৪২টা আসনের মধ্যে ৪২টাই আমাদের চাই-এটাই আমাদের শপথ।’

সর্বশেষ খবর