মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

কালবৈশাখী ঝড় বৃষ্টি, নিহত ৭

জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কালবৈশাখী ঝড় বৃষ্টি, নিহত ৭

ঢাকার আকাশে গতকাল ছিল রোদ ও মেঘের লুকোচুরি। কয়েকটি এলাকায় সকালে ঝড়-বৃষ্টিও হয়। তবে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই শুরু হয় বজ্রপাত ও তীব্র শিলাবৃষ্টি। এ সময় রাজধানীজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে প্রচ  বাতাস বয়ে যায়। এর আগে কয়েকদিন ধরেই রাজধানীতে থেমে থেমে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়। এদিকে, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, ভোলার চরফ্যাশন ও নেত্রকোনায় কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল সারা দিনে তারা ৫১.৮ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেন। আজও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হবে বলে আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন। তারা জানান, বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের বৃষ্টি পরিমাপক কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত সীতাকুন্ডে  সর্বোচ্চ ৭০ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। রাজধানীতে সকালে হালকা বৃষ্টির সঙ্গে একদফা কালবৈশাখী বয়ে যায়। দুপুরে হালকা বৃষ্টি শেষে রোদের দেখা মিললেও বিকালে কালো মেঘে বদলে যায় আকাশের চেহারা। এ সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় কালবৈশাখীর তা ব। এর সঙ্গে যুক্ত হয় শিলাবৃষ্টি। ভারি বৃষ্টিপাতে রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা, মহাখালী, ফার্মগেট ও বিজয় সরণিসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। প্রধান সড়কে পানি জমে যাওয়ায় সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। পথচারীদের অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে তীব্র ভোগান্তির শিকার হন। এ সময় বেশ কয়েকটি এলাকায় বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় গাছ উপড়ে যায় এবং বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যায়। আবহাওয়াবিদরা জানান, কালবৈশাখীর এই সময় সাধারণত থেমে থেমে ঝড়-বৃষ্টি হয়। ১৪ এপ্রিলের পর এই প্রবণতা হয়তো কিছুটা কমে যাবে। সে সময় তাপমাত্রাও বেড়ে যাবে। তবে এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে কালবৈশাখী কিছুটা বেশি হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত যে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে একে স্বাভাবিক বলা যায়। গতকাল শুধু ঢাকায় নয় দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও কালবৈশাখী ও বৃষ্টিপাত হয় বলে আবহাওয়াবিদরা নিশ্চিত করেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- সুনামগঞ্জ : সদর ও ধর্মপাশা উপজেলায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে ধর্মপাশা উপজেলার ধারাম হাওরে বোরো ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে মারা যান ফজলুল হক (২৭) নামে শ্রমিক। তার বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার তুলাবাইফ গ্রামে। বিকালে সদর উপজেলার মদনপুর রাস্তার পাশে বেগুন খেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে নিহত হন আউয়াল মিয়া (৭০) নামে এক বৃদ্ধ। তার বাড়ি নীলপুর কলাইয়া গ্রামে। ময়মনসিংহ : হালুয়াঘাট উপজেলার খন্দকপাড়া গ্রামে আনারুল ইসলাম (৩০) নামে এক যুবক বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। সকালে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হয়ে বাথরুমে গেলে সেখানে বজ্রাঘাতের শিকার হন তিনি। আনারুল খন্দকপাড়ার নায়েব আলীর ছেলে। চাঁদপুর : কচুয়ার ঘুগড়ার বিলে ঘাস কাটতে গিয়ে সকালে বজ্রপাতে মোসলেম মিয়া (৫৮) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। তিনি বিতারা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ফজর আলীর ছেলে। চরফ্যাশন : ভোলার চরফ্যাশনে বজ্রপাতে মধুমতি ব্রিকস ফিল্ডের শ্রমিক জসিম (২৬) মারা গেছেন। কুমিল্লা : বুড়িচং উপজেলার কোরপাই এলাকায় গতকাল কালবৈশাখী ঝড়ে কমপক্ষে ২০টি আধাপাকা ঘর, ছাত্রাবাস ও টিনের ঘরসহ শতাধিক ফলদ ও বনজ গাছসহ আবাদি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তোড়ে কয়েকটি বাড়ির টিনের চাল ও বেড়া প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের অন্য এলাকায় উড়িয়ে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও এলাকার কয়েক একর আবাদি জমির সবজি ও ফসলের খেতের ক্ষতি হয়েছে। শতাধিক বড় গাছ উপড়ে পড়েছে ঝড়ে। স্থানীয় মোকাম ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক মুন্সী জানান, ঝড়ে কোরপাই গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে বাড়ি ঘরসহ গাছ ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

নেত্রকোনা : নিহত সিদ্দিক পূর্বধলা উপজেলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের উপলা গ্রামের মৃত ইরাজ আলীর ছেলে ও ফজল একই উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের তুলাবাইদ গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে।

পূর্বধলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নমিতা দে বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জানান, গরুর ঘাস কেটে বাড়ি ফেরার পথে উপলা গ্রামে নিজ বাড়ির কাছে বজ্রপাতে কৃষক সিদ্দিকের মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর