মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা

প্রয়োজন ২০৭ ডাক্তার আছে ৪৭ জন

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসক সংকটের কারণে সাতক্ষীরা জেলার স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। জেলায় ২০৭ জন ডাক্তারের পদে মাত্র ৪৭ জন কর্মরত আছেন। দীর্ঘ দিন ১৬০ জন ডাক্তারের পদ শূন্য পড়ে থাকায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সাতক্ষীরা জেলার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। সরবরাহ না থাকায় হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সরকারিভাবে ঠিকমতো ওষুধ সামগ্রী দেওয়া হয় না রোগীদের। অধিকাংশ ওষুধ উচ্চমূল্যে বাইরে থেকে কিনতে হয়। জেলার ২২ লাখ মানুষের বিপরীতে মাত্র ৪৭ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। ৫০ শয্যা হাসপাতালের লোকবল নিয়ে চলছে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নিত হলেও সেই থেকে অদ্যাবদি ৫০ শয্যার লোকবল নিয়ে চলছে জেলা সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও মেডিকেল অফিসারসহ ৩০ জন ডাক্তার নিয়োগ থাকার কথা থাকলেও ১৮ জন ডাক্তারের পদ শূন্য পড়ে আছে। প্যাথলজি, চক্ষু, সার্জারি, অর্থো-সার্জারি, অ্যান্সেথেসিয়া, ইএনটিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে সিনিয়র বিশেষজ্ঞ  ডাক্তারের পদ শূন্য পড়ে থাকায় বিপাকে পড়েছে রোগীরা। গ্রাম-গঞ্জ থেকে আসা শত শত গরিব অসহায় রোগীরা গুরুত্বপূর্ণ ওই পদে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছে। সদর উপজেলা কমপ্লেক্সের ৭ জন ডাক্তার দিয়ে প্রেষণে চলছে সাতক্ষীরা জেলা সদর হাসপাতালের বর্তমান কার্যক্রম। এছাড়া ল্যাব (প্যাথলজি) টেকনোলজিস্ট, এক্স-রে, ফার্মাসিস্ট ও স্টোর কিপার এবং নার্সিং সুপারভাইজারের পদ শূন্য পড়ে আছে। জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মরত ডাক্তারা। অন্যদিকে, চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনরা নাজেহাল হচ্ছেন।

তবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অফিস সময় ও ইমারজেন্সি এবং বহিঃবিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা হলেও বেশির ভাগ চিকিৎসক কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। অনেক সময় দুপুরের ঘড়ির কাটা ১টা বাজতেই প্রাইভেট ক্লিনিকের পথ ধরেন। সরেজমিন সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের দীর্ঘ লাইন। প্রতিদিন এ হাসপাতালে ৫ থেকে ৬শ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন। সেবা নিতে আসা সবার মুখেই হতাশার ছাপ। অনেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা দেনগর গ্রামের ফরিদা খাতুন বলেন, আমি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আসাদুজ্জামানকে দেখাতে এসেছি, কিন্তু ডাক্তার না থাকায় টিকিট কেটে সকাল ৯টা থেকে ৪/৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ডাক্তার কখন দেখবেন তা কেউ বলতে পারছে না। সদর উপজেলা শিয়ালডাঙ্গা থেকে মহিলা সার্জারি বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগী সাইরা খাতুন বলেন, হাসপাতাল থেকে ২/১ একটা ওষুধ দিচ্ছে বাকি সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। এছাড়া রাতে ডাক্তার আসার কথা থাকলেও গত দুদিন আসেনি। কলারোয়া উপজেলা থেকে আসা হার্ড অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগী হাসিনা বেগম বলেন, গত ২৫ মার্চ ভর্তি হওয়ার পর থেকে কয়েকটি গ্যাসের ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করেছে, বাকি সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে খাদ্য খাবারও ঠিকমতো দেওয়া না। কুশখালী থেকে আসা সিজারের রোগী আন্না রায় বলেন, ওটিতেও অধিকাংশ জিনিসপত্র বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। এছাড়া কিছু ওষুধ ছাড়া সব ওষুধ বাইরের ফার্মেসি থেকে উচ্চমূল্যে কিনতে হচ্ছে। একই চিত্র জেলার ৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সাতক্ষীরা তালা, কলারোয়া, কালীগঞ্জ, আশাশুনি, শ্যামনগর ও দেবহাটার সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার ও ওষুধ সংকটে মিলছে না চিকিৎসাসেবা। অব্যবস্থা ও অনিয়মে ভেঙে পড়েছে কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবার মান। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শূন্যপদ পুরুষের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। লোকবল সংকট দূর হলে যথাযথভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর