শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বাভাবিক গতি রাখতে হবে নদীর

বিশ্ব পানি দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাভাবিক গতি রাখতে হবে নদীর

নদীর স্বাভাবিক গতি যেন অব্যাহত থাকে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের প্রবণতা থাকে নদী শাসন করার। আমরা আমাদের প্রয়োজনে অনেক নদীতে ব্রিজ তৈরি করি। ব্রিজটা যেন ছোট হয়, সে জন্য নদীকে ছোট করা হয়। আমি এই মতের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে ভিন্নতা পোষণ করছি। নদীর স্বাভাবিক গতি যেন অব্যাহত থাকে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্র্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশ্ব পানি দিবস-২০১৯’ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর সব সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদীর তীরে। কিন্তু এই পানি অনেক সময় মানুষের জীবন সর্বনাশের দিকে নিয়ে যায়। তাই আমাদের জন্য যেন পানি আশীর্বাদ হয়ে আসে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

নদী ব্যবস্থাপনাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ব্যাপারে দেখেছি অনেক সরকার মিছিল করেছে, কেউ পদযাত্রা করেছে। কেউ আন্তর্জাতিকভাবে বারবার তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি চিন্তা করি যে, দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যে সমস্যাটা যেটা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তো সমাধান করতে পারি। এখানে আমাকে তৃতীয় পক্ষ টানতে হবে কেন। সেইভাবেই আমরা আলোচনা করে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি চুক্তি সম্পন্ন করেছি আলোচনার মধ্য দিয়েই।’ সেই সঙ্গে আরও ৫৪টি নদী নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এবং একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র সেন, মন্ত্রণালয় সচিব কবির বিন আনোয়ার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শতবর্ষের ব-দ্বীপ সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। পলি জমে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার ফলে ভাঙনও বেশি দেখা দেয়, আমাদেরও ক্ষতি হয়। নদীকে আশীর্বাদে রূপান্তর করার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার, নদীগুলো নিয়মিত খনন করে নদীর গতিপথটাকে সঠিক রাখা, সেই সঙ্গে পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বর্ষাকালে যখন বেশি পানি আসবে তখন পানি যেন ধারণ করতে পারে তার জন্য জায়গা রাখা প্রয়োজন। এটি মাথায় রেখেই আমাদের পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। নদী বাঁধ মানে না। প্রবল বর্ষার পানির স্রোতটা অনেক বেশি হয়। যারা এই নদীতে চলাফেরা করেছেন বা বর্ষাকালে নৌকা স্পিডবোটে চড়ে থাকেন তারা দেখবেন যে পানির গতি বা স্রোত কত শক্তিশালী হয়। আমি যখনি সরকারে এসেছি তখনই খুব জোর দিয়েছি, আমাদের নদীগুলো ড্রেজিং করার ওপরে, বিশেষ করে আমাদের নৌপথগুলো পুনরায় চালু করা, সারা দেশে একসময় নৌপথই ছিল মূল পথ।’ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের শুরুতে এর দৈর্ঘ্য কমানোর কথা উঠেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, না সেটা আমি দেব না। ঠিক যে পয়েন্টে নদীটা আছে, ওই পয়েন্টে মূল নদী কত কিলোমিটার সেটি হিসাব করে, বাফার জোন রেখেই আমাকে সেতু নির্মাণ করতে হবে। এ জন্য পদ্মা সেতু সাড়ে ছয় কিলোমিটার। তিনি আরও বলেন, যমুনা নদীতে যে সেতুটা করা হয়েছে, ওটাও যদি ছয় কিলোমিটারের মতো লম্বা হতো বা সাড়ে ছয় কিলোমিটারের মতো লম্বা হতো; তাহলে কিন্তু বারবার এই ভাঙনের মুখে পড়ত না। সেখানে নদী শাসন করে, গাইড নির্মাণ করে বলা হয়েছিল ১০০ বছরে এটা কিছু হবে না, ফাটলও ধরবে না। কিন্তু দেখা গেল, ১০ বছরও গেল না। সিরাজগঞ্জ ভাঙতে শুরু করে। নদী ভাঙার আরও এক কারণ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পলি জমে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়। যখনি কোথাও কোনো নদী ভাঙনের শুরু হয় তখন সবার আগে নির্দেশ দেই ওখানে ডুবোচরটা কোনদিকে আছে, সেটা খুঁজে বের করে ওটা কেটে ফেলার নির্দেশনা দেই। কারণ ওটা কেটে ফেললে অটোমেটিক নদীর পানি গড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, নদীরও একটা নিজস্ব চরিত্র আছে। এই নদী যখন প্রথম সৃষ্টি হয়, তখন যে গতি তার ছিল, যেখান থেকে নদীটা বহমান ছিল হয়তো দেখা গেল, শতবর্ষ পরেও কখনো না কখনো সে হঠাৎ করে তার সেই পূর্বের জায়গাটা থেকে ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড হয়ে নেমে আসে। এটাও কিন্তু নদীর একটা চরিত্র। এই ঘটনা সিলেটের মনু নদীতে যেমন একবার ঘটেছিল।

সর্বশেষ খবর