শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

নৌ ট্রানজিট পাচ্ছে ভুটান

মোংলা বন্দর থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী হয়ে পণ্য যাবে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী হয়ে নৌপথে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাচ্ছে প্রতিবেশী ভুটান। ভারতের মতো এ দেশটিও বাংলাদেশের বন্দর ও নদীপথ ব্যবহার করে অন্য দেশ থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করতে পারবে। এজন্য নির্ধারিত মাশুল পরিশোধ করতে হবে দেশটিকে। এ বিষয়ে চুক্তি করতে চার দিনের সফরে আজ ঢাকায় আসছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্র, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং।

সূত্র জানান, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যকার বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তি এবং প্রটোকলের আওতায় এ ট্রানজিট সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের নদীপথে ভুটানে পণ্য পরিবহনসংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)-এর খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। ঢাকায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নৌপথে ট্রানজিট-সংক্রান্ত এসওপিটি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। খসড়া এসওপি অনুযায়ী মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে কার্গো জাহাজ কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর দিয়ে দৈখাওয়া নদী হয়ে ভারতের ধুবড়ি নদীবন্দর পর্যন্ত নৌপথে পণ্য পরিবহন করা হবে। এরপর ধুবড়ি নৌবন্দর থেকে সড়কপথে ভুটানের পণ্য পরিবহন করা হবে।

জানা গেছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি ও প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি)-এর আওতায় বাংলাদেশের বন্দর ও অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছে ভারত। এসওপি স্বাক্ষর হলে ভারতের পর ভুটান হবে দ্বিতীয় দেশ যারা বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করে ট্রানজিট সুবিধা নেবে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহাবুব-উল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে ভুটান সফরে গিয়ে নৌ প্রটোকল রুট ব্যবহারসংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে নৌ প্রটোকলসংক্রান্ত এসওপি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। যত দূর জানি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরে এ চুক্তিটি হতে পারে।’ বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান জানান, এসওপি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বন্দর ও নদী ব্যবহারের সুযোগ পাবে ভুটান। এতে বন্দর সুবিধা না থাকা ভুটান আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে খুবই উপকৃত হবে। তার বিপরীতে বাংলাদেশও আর্থিকভাবে লাভবান হবে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের এই কর্মকর্তা জানান, গত মাসে ভুটানের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছিলেন। তারা নৌপথটি পরিদর্শন করে গেছেন। মোংলা বন্দর থেকে মাওয়া, আরিচা ঘাট, যমুনা নদী হয়ে চিলমারী বন্দর দিয়ে তারা পণ্য পরিবহনের প্রাথমিক রুটটি চূড়ান্ত করেছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে সড়ক, রেল ও নৌপথে ভারতের ওপর দিয়ে ভুটানের পণ্য পরিবহনের বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়ে রেখেছে। খসড়া এসওপিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌ প্রটোকল বা ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি)’-এর যে রুটগুলো রয়েছে তার মধ্যে থেকেই ব্যবহার করবে ভুটান।

 প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছিল ১৯৮০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। ২০০৯ সালের ৭ নভেম্বর নতুন করে আবারও সেই চুক্তি করা হয়। পরে ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর নবায়ন করা হয়। ওই চুক্তির আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থিম্পু সফরে দুই দেশের মধ্যে নৌপথে পণ্য পরিবহনে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এরই আওতায় এসওপি চুক্তির মাধ্যমে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পাচ্ছে ভুটান।

সর্বশেষ খবর