শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
পদ্মার তলদেশ দিয়ে বিচ্ছিন্ন চরে বিদ্যুৎ

কেরোসিনের কুপি থেকে আলোর ঝলকানি

রফিকুল ইসলাম রনি

কেরোসিনের কুপি থেকে আলোর ঝলকানি

শরীয়তপুর জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে পদ্মা নদীর মাঝে অবস্থিত দুর্গম চর। কাছিকাটা, নওয়াপাড়া, চরআত্রা ও কুণ্ডেরচর ইউনিয়ন। জেলার মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত এই এলাকার মানুষ। বিদ্যুতের আলো এখানকার মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো। সন্ধ্যা নেমে এলেই অন্ধকারে ডুবে যায় পুরো চরাঞ্চল। এ অঞ্চলকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা হচ্ছে। শরীয়তপুর জেলা শহর বা উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ জেলা থেকে পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর ৮০০ মিটার অংশে বিদ্যুতের লাইন নেওয়া হবে। আগামী ২৩ এপ্রিল দুর্গম চরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সাবমেরিন ক্যাবল ও সাব পাওয়ার স্টেশনের উদ্বোধন করবেন স্থানীয় এমপি ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। ফলে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে ওই চরে বসবাসকারী ৫০ হাজার পরিবার। মুক্তি মিলবে কুপি বাতির আলো থেকে। এ নিয়ে চরাঞ্চলের এ তিন ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পদ্মা ও মেঘনা নদীর পার ঘেঁষে গড়ে ওঠা চরে প্রায় ৭০ বছর আগ থেকে মানুষের বসবাস শুরু। ওই চরের নওয়াপাড়া ও চরআত্রা ইউনিয়ন পড়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়। আর কাঁচিকাটা ইউনিয়ন ভেদরগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। চরের মানুষের ভরসা হারিকেন ও প্রদীপের আলো। বিদ্যুতের আলো তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। এ চরগুলো শরীয়তপুর-২ আসনের অন্তর্ভুক্ত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে এম এনামুল হক শামীম নির্বাচনী গণসংযোগে গেলে স্থানীয়রা চরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের দাবি তোলেন। নির্বাচিত হতে পারলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দলের এ সাংগঠনিক সম্পাদক। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি প্রতিশ্রুতি পূরণের উদ্যোগ নেন। এ জন্য জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেন। শরীয়তপুর তীর অংশ থেকে ওই চরের দূরত্ব সাড়ে ৫ কিলোমিটার হওয়ায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। তবে চরের নিকটবর্তী মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে নওয়াপাড়া নদীর দূরত্ব ৮০০ মিটার হওয়ায় সহজে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়। পরে মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। সভায় সিদ্ধান্ত হয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদী দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নেওয়া হবে। এরপর শুরু হয় বিচ্ছিন্ন চরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কর্মযজ্ঞ। মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর মাঝের তিনটি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কাজ শুরু হয়েছে। কোথায় কোথায় পুল বসবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার প্রক্রিয়ার জরিপ চলছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। নদীর অংশটুকু সাবমেরিন ক্যাবলে আর বাকি অংশে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। মুন্সীগঞ্জ বিদ্যুতের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়নায় আবেদীন বলেন, ২০০ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার লাইন ইতিমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে। বাকি ৫০ কিলোমিটার লাইন খুব শিগগিরই প্রস্তুত হবে। আগামী ডিসেম্বরের আগে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে। শরীয়তপুর-২ আসনের এমপি ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমি যখন ওই চরে গণসংযোগে যাই, তখন চরবাসীর বড় দাবি ছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, ভোটে জিতলে তিন মাসের মধ্যেই বিদ্যুতের আলো পৌঁছাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণায় ও তার নির্দেশে আমি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছি।’ তিনি বলেন, আগামী ২৩ এপ্রিল সাবমেরিন ক্যাবল ও সাব পাওয়ার স্টেশনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কুপি বাতির আলো থেকে মুক্ত হয়ে চরাঞ্চলের মানুষগুলো বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে।’ ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরো চরে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছবে। নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল মুন্সী বলেন, আমাদের ইউনিয়নটি দুর্গম চর। পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে তা কখনো ভাবিনি। এ এলাকায় বিদু্যুৎ আসছে এমন খবরে আমরা আনন্দিত। চরআত্রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিনা রতন বলেন, ৭০ বছর ধরে এ চরে মানুষ বসবাস করলেও বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। বিদ্যুৎ ছিল তাদের স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে বর্তমান এমপি এনামুল হক শামীমের কল্যাণে।

সর্বশেষ খবর