শিরোনাম
শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুর্নীতি রোধে ৫ বছর টিআর কাবিটা বরাদ্দ বন্ধ

নিজামুল হক বিপুল

দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে সরকার আগামী পাঁচ বছর টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের বিশেষ বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে। গত বুধবার এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্নজনের নামে এই বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হতো। বিশেষ বরাদ্দের এই অর্থ দিয়ে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে গ্রামের গৃহহীন দরিদ্র মানুষকে। আগামী জুনের মধ্যে নির্মাণ করা হবে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ঘর। আর পাঁচ বছরে নির্মাণ করা হবে ১ লাখ ২৫ হাজার ঘর। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র জানায়, টিআর ও কাবিটার আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ শীর্ষক একটি প্রকল্প গত বুধবার অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে টিআর ও কাবিটার যে বিশেষ বরাদ্দ এত বছর ধরে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, চেয়ারম্যানসহ অন্যদের নামে বরাদ্দ দিয়ে আসছিল সেটি বন্ধ করে দিল সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় বিশেষ বরাদ্দের অর্থ দিয়ে ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় ৪০০ বর্গফুটের দুটি ঘর নির্মাণ করে দেবে সরকার। ঘরে থাকবে দুটি বারান্দা ও একটি টয়লেট। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে সামগ্রিক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকল্পে গৃহহীন পরিবারের জন্য টেকসই গৃহ নির্মাণ, দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, গ্রামীণ এলাকায় শহরের সুবিধা প্রদান, এসডিজির ১৩ নম্বর লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করা। এ কর্মসূচিতে উপকারভোগী হবেন দরিদ্র গৃহহীন পরিবার যাদের কমপক্ষে ৪০০ বর্গফুট পরিমাণ জমি রয়েছে অথবা ওই পরিমাণ জমি দান/লিজ অথবা স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক প্রাপ্ত এমন পরিবার। দেশের দরিদ্র এলাকার হতদরিদ্র গৃহহীন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, নদীভাঙনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে গৃহহীন পরিবার, বিধবা/তালাকপ্রাপ্তা মহিলা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও পরিবারে উপার্জনক্ষম সদস্য নেই এমন পরিবার অগ্রাধিকার পাবে। জমির সংস্থান সাপেক্ষে গৃহহীন হিজড়া, বেদে, বাউল প্রভৃতি সম্প্রদায় এ কর্মসূচির আওতায় আসবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকল্পের উপকারভোগী কারা হবেন নীতিমালার মাধ্যমে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে গঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করবে। আগামী পাঁচ বছর এ প্রকল্প চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর ২৫ হাজার ঘর নির্মাণ করা হবে। তবে প্রথম বছরে আগামী জুনের মধ্যে নির্মাণ করা হবে ১১ হাজার ৬০৪টি বাড়ি। প্রসঙ্গত, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সরকারের সময় টিআর ও কাবিটার আওতায় নিয়মিত বরাদ্দের বাইরে প্রতি বছর রাজনৈতিক বিবেচনায় জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ বরাদ্দ দিত সরকার। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের বিপরীতে এই বরাদ্দ দেওয়া হলেও বরাদ্দের পুরোটাই চলে যেত মাঠ পর্যায়ের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের কাছে। বিভিন্ন জায়গায় ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হতো বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই। ফলে গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন তো দূরের ব্যাপার, এই বরাদ্দ দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কোনো কাজেই আসত না।

সর্বশেষ খবর