শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
রাজনীতির এখন

চলতি সপ্তাহেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাত্রলীগের

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক সপ্তাহের মধ্যেই ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীদের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। ঘোষিত হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গত বছর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদেরই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে নেওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘ ৯ মাসেও কমিটি গঠন নিয়ে দুই নেতা একমত হতে পারেননি। দীর্ঘদিন ভেতরে ভেতরে গ্রুপিং থাকলেও বাংলা নববর্ষ উদ্্যাপন নিয়ে প্রকাশ্যে কোন্দল চলে আসায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং এবং বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ যে, কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে ছাত্রলীগের কমিটি করতে কয়েকজন নেতাকে বিশেষ দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই নেতারা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য ৫০ জন করে মোট ১০০ জনের তালিকা দিতে সংগঠনটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পাঁচ দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন। গতকাল দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তাদের এই সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। বৈঠক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকেও তালিকা জমা দিতে নির্দেশ দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

জানা গেছে, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে বেলা ১২টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর অফিসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই দলীয় কার্যালয়ে আসেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন। তবে ছাত্রলীগের দুই নেতা দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে আসেন আধাঘণ্টা পর। বেলা পৌনে ১টায় বৈঠক শুরু হয়। তবে নির্ধারিত বৈঠক শুরুর আগে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বের হয়ে যান। এ ছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেনও নির্ধারিত বৈঠক শুরুর কিছুক্ষণ পর বের হয়ে যান।

বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর শেখ হাসিনার কঠোর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে ৫০ জন করে মোট ১০০ জনের তালিকা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে থাকা ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতেও বলা হয়েছে। এ সময় তারা দুজনই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে বলে জানান।

সূত্র জানায়, বৈঠকে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা জানান, তাদের নিজেদের মধ্যে আর কোনো ঝামেলা নেই। এ সময় দুই নেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগ নেতারা রাতেই তাদের গণভবনে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা গতকাল রাতেই গণভবনে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভুলের জন্য ক্ষমা চান বলে সূত্র জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ও গণমাধ্যমের একাধিক কর্মী জানান, শোভন-রাব্বানী কারও ফোনও রিসিভ করেন না। এমনকি দলের শীর্ষ নেতাদের ফোনও তারা রিসিভ করার সময় পান না।

বৈঠক ও ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের  রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে নিয়ে বৈঠক করেছি। বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তালিকা প্রস্তুত করতে নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যেই কমিটি ঘোষণা করা হবে।’ তিনি বলেন, বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, তালিকা তৈরি করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে এখন আর কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই। ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এখন একাট্টা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে পদপ্রত্যাশী নেতারা জানান, ছাত্রলীগে পদ পেতে লবিংয়ে এগিয়ে রয়েছেন বিতর্কিতরাই। এ জন্য তারা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বাসা-বাড়ি ও অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন।

 

সর্বশেষ খবর