শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
রাজনীতির এখন

ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে জাপায় ঠাণ্ডা লড়াই

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে পার্টির কর্তৃত্ব কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে এ নিয়ে দলটির ভিতরে চলছে ঠা া লড়াই। পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে এরশাদের অবর্তমানে চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলেও দলের ভিতরের একটি অংশ এরশাদের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে চলেছেন। তারা চাচ্ছেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদকে পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান বানাতে। এদিকে জি এম কাদেরকে পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান ঘোষণা করায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করলেও পার্টিতে জি এম কাদের বিরোধীরা এখনো সক্রিয় ঠা া লড়াইয়ে। ৪ এপ্রিল সহোদর জি এম কাদেরকে পুনরায় পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান  ঘোষণা করার পর থেকে পার্টির নেতা-কর্মীরা এরশাদের বাসবভন প্রেসিডেন্ট পার্কে পাহারা অব্যাহত রেখেছেন যাতে করে কাদেরবিরোধীরা এরশাদকে দিয়ে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাতে না পারে। পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় ছাত্র সমাজের আলোচনা সভায় বলেছেন, জাতীয় পার্টির আগামী নেতৃত্ব কাউন্সিলের মাধ্যমেই নির্ধারণ হবে। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। জানা যায়, কে ভবিষ্যৎ নেতা এই লড়াইয়ে জাতীয় পার্টিতে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। এক গ্রুপে রয়েছেন এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ, অন্যটিতে তার ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। এই দুজনের মধ্যে এরশাদের অবর্তমানে দলটির নেতৃত্বে কে থাকবেন, তা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে চলছে কোন্দল। আর এ অবস্থায় দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অনেকটাই অসহায়। কোনোভাবেই তিনি দলের ঐক্য ধরে রাখতে পারছেন না। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার মতে, এরশাদের অনুপস্থিতিতে জাপা ভেঙে দুই টুকরা হয়ে যাবে। এখনই সেই ভাঙনের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে বলেও দলটির সিনিয়র নেতারা মনে করেন। জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, পার্টিতে পল্লীবন্ধু এরশাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ইতিমধ্যে জানিয়েছেন কে হবেন পার্টির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। যদিও এটা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানারকম আলোচনা আছে। পার্টির স্বার্থে এইচ এম এরশাদের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এ টি ইউ তাজ রহমান বলেন, প্রেসিডিয়াম থেকে শুরু করে পার্টির সব পদ-পদবি আমরা এইচ এম এরশাদের স্বাক্ষরে পেয়ে থাকি। জি এম কাদেরের বিষয়েও তিনি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা যদি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তবায়ন করি তা-ই হবে পার্টির জন্য মঙ্গলজনক। জানা যায়, এরশাদ অসুস্থ। এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদ থেকে সড়িয়ে দেওয়ার পর থেকেই দলের নেতৃত্বের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় এরশাদ দলের ভবিষ্যৎ দায়িত্ব দিতে চান সহোদর জি এম কাদেরকে। নিজের অবর্তমানে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে জি এম কাদেরকে নিয়ে বারবার সিদ্ধান্ত করেছেন। সবমিলিয়ে দলটির সিনিয়র নেতা ও দলীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তারা দলের অনুষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাস দেখলে আমরা বুঝতে পারব এ দেশে পরিবারের বাইরে কোনো পার্টি টিকে থাকতে পারেনি। মুসলিম লীগ ও জাসদও আজ হারিয়ে যাচ্ছে। যারা এরশাদ পরিবারের বাইরে কাউকে নেতা বানানোর চেষ্টা করছেন তারা প্রকৃতপক্ষে এরশাদ ও জাতীয় পার্টির মঙ্গল কামনা করেন না। জানা যায়, এরশাদ নিজেও শেষ বয়সে আর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে সহোদর ভাইকে পার্টির উত্তরাধিকার হিসেবে দেখতে চান। যার কারণে পার্টিতে কাদের বিরোধীদের পাত্তা দিচ্ছেন না এইচ এম এরশাদ। সম্প্রতি জাপার দুই প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদেরের বিষয়টি পরিবর্তনের জন্য এরশাদের বাসভবনে গেলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এদিকে হাল ছাড়ছেন না জি এম কাদের বিরোধীরাও। তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। যদিও তাদের মাঝে বেশ কয়েকজন নেতা ইতিমধ্যে দলের বৃহত্তর স্বার্থে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক ছাত্রনেতা ও পার্টির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের পার্টিতে রাজনৈতিক কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আছে পারিবারিক কোন্দল। আর এ  কোন্দলে পার্টির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জড়িত থাকলেও তৃণমূল অথবা মধ্যম সারির কোনো নেতা-কর্মীই এ দ্বন্দ্বের মাঝে নেই। সিনিয়র নেতারাই সিদ্ধান্ত নিয়ে এইচ এম এরশাদকে বিভ্রান্তির মাঝে ফেলেন। সার্বিক প্রসঙ্গে গোলাম মোহাম্মদ কাদের মুঠোফোনে বলেন, জাতীয় পার্টি একটি বড় ও সংসদে প্রধান বিরোধী দল। এখানে পদ-পদবির জন্য প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। পল্লীবন্ধু এরশাদ আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি পার্টির সব সিনিয়র নেতাদের পরামর্শক্রমে, সবার সমন্বয়ে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। সবাই একটেবিলে বসলে অনেক বিভেদ ও সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

সর্বশেষ খবর