রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানসম্মত প্রশ্ন করতে পারছেন না শিক্ষকরা

বাইরের প্রশ্নে পরীক্ষা নিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান

আকতারুজ্জামান

পরীক্ষার জন্য মানসম্মত প্রশ্ন করতে পারছেন না শিক্ষকরা। ভুল আর বিতর্কিত তথ্যেও ভরপুর থাকছে প্রশ্ন। এ ছাড়া গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে পড়াতে গিয়ে শিক্ষকরা বোঝাতে পারছেন না শিক্ষার্থীদের। কারণ, শিক্ষকদের অনেকেই বোঝেন না সৃজনশীল পদ্ধতি। পরীক্ষার সময় তারা বাইরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা নেন ছাত্র-ছাত্রীদের, এমন অভিযোগও রয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নে সম্ভাব্য উত্তরের স্থানে দেওয়া হয়েছে দুই পর্নো তারকার নাম। দেখা গেছে ৮নং প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে, ‘আম-আটির-ভেঁপু’ কার রচিত?’ এ প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তরের একটি নাম পর্নো তারকা ‘সানি লিয়ন’ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২১নং প্রশ্নে ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম কী?’ প্রশ্নটির সম্ভাব্য চারটি উত্তরের মধ্যে একটিতে রয়েছে পর্নো তারকা ‘মিয়া কালিফা’র নাম। ৪নং প্রশ্নে ‘প্রমথ চৌধুরীর পৈতৃক নিবাস কোথায়?’ প্রশ্নের একটি অপশনে ‘ঢাকার বলধা গার্ডেনে’ লেখা হয়েছে। এসব প্রশ্নে বিব্রত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা আর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। এ ছাড়াও প্রশ্নটিতে ভুল বানানসহ নানা অসঙ্গতি রয়েছে। সারা দেশেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশ্ন প্রণয়নে প্রায়ই দেখা যায় নানা ভুল আর অসঙ্গতি। রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলের বিতর্কিত প্রশ্নে শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে।

পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে এসে শিক্ষার্থীদের বুঝে পড়া উৎসাহিত করতে ২০০৮ সালে চালু করা হয় সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি। তখন বলা হয়েছিল, সৃজনশীল প্রশ্নের গঠন কাঠামো শিক্ষার্থীর পরীক্ষাভীতি দূর করবে। কিন্তু সৃজনশীল নিয়ে খোদ শিক্ষকদেরই ভীতি কাটেনি। শিক্ষকরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান করতে গিয়ে শেখাতে পারছেন না শিক্ষার্থীদের। প্রশ্ন তৈরি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেরা প্রশ্ন করতে না পেরে বাইরে থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করছে। আবার কোনো কোনো শিক্ষক গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দিয়ে নিচ্ছেন সৃজনশীলের পরীক্ষা। কুমিল্লা বোর্ডের একটি পাবলিক পরীক্ষায় বাংলা প্রথমপত্রের সৃজনশীল প্রশ্ন হুবহু গাইড বই থেকে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবে শিক্ষকরাই বুঝছেন না সৃজনশীল। শিক্ষকদের অযোগ্যতায় মাঠেই মারা যাচ্ছে এ শিক্ষা পদ্ধতি। ভেস্তে যাচ্ছে এ পদ্ধতি প্রবর্তনের উদ্দেশ্য। শিক্ষকদের এ পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না দেওয়ায় চালুর ১১ বছর পরও সৃজনশীল চলছে জোড়াতালিতে।  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সর্বশেষ ‘একাডেমিক সুপারভিশন প্রতিবেদন’-এ দেখা গেছে, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সৃজনশীলের প্রশ্ন প্রণয়ন করছে না। সারা দেশে ৯টি শিক্ষা প্রশাসনিক অঞ্চলের ৬ হাজার ৪৪২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সুপারভিশন করে এ প্রতিবেদন করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে ছিল বরিশাল। এ অঞ্চলের ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সৃজনশীলের প্রশ্ন বাইরে থেকে সংগ্রহ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, অনেক শিক্ষক মানসম্মত প্রশ্ন করতে পারছেন না। কারণ, মানসম্মত প্রশ্ন করার পূর্বশর্ত হচ্ছে যোগ্য শিক্ষক। অনেক শিক্ষকের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাি ত্য নেই। তাই তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। এ শিক্ষকদের কারণে শিক্ষার্থীরা ভুগছে। তিনি বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষকরা দক্ষ হতে পারেননি। সরকারি জরিপেই দেখা গেছে প্রায় অর্ধেক শিক্ষক সৃজনশীল বোঝেন না।

সর্বশেষ খবর