রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাগেরহাটে ২৩ নদীর মৃত্যু, পুটিমারীতে ফসল চাষ

নদী বাঁচাও - ৫৭

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

বাগেরহাটে ২৩ নদীর মৃত্যু, পুটিমারীতে ফসল চাষ

বঙ্গোপসাগর উপকূলের জেলা বাগেরহাটে মরে গেছে ২৩টি নদী। জেলার ৯ উপজেলার বুক চিরে বহমান এসব নদীতে এখন আর লঞ্চ-স্টিমার ও কার্গো ভ্যাসেল চলাচল করে না। নদীগুলোর অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, ভাটার সময় নদীতে হাঁটুপানিও থাকে না। পুটিমারী, বলেশ^রসহ অনেক নদী ভরাট হওয়ায় সেখানে এখন ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে।

পলি জমে মরে যাওয়া ২৩ নদী হচ্ছে- পুটিমারী, বিশনা, মোংলা, ভোলা, কালীগঞ্জ, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, বলেশ্বর, ভৈরব, তালেশ্বর, ভাষা,  বেমরতা, দোয়ানিয়া, কুচিবগা, ছবেকী, রাওতি, বেতিবুনিয়া, কলমি,  দোয়ানিয়া, যুগীখালী, কুমারখালী, কালীগঙ্গা ও চিত্রা। এসব নদী মরে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত পলি জমে মরে গেছে তিন শতাধিক ছোট-বড় শাখা খালও। অন্যদিকে নদী-খাল শুকিয়ে যাওয়ার ফলে কৃষকরা চাষাবাদ করতে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না। আর বর্ষা  মৌসুমে জলাবদ্ধতায় প্রতিবছরই কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে। জানা গেছে, এ জেলায় লাখ লাখ হেক্টর ফসলি জমি ও খালে বেড়িবাঁধ দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের ফলে ফসলি জমিতে স্বাভাবিক  জোয়ারের পানি উঠতে পারছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়াপদা) ৫টি  পোল্ডারের ১৬৫টি স্লুইসগেটে সরকারিভাবে কোনো লোকবল নিয়োগ না থাকায় ভাটার পানি নামার সময় ফ্লাপগেটগুলো (স্লুইসগেটের নিচের অংশ) সবসময় বন্ধ থাকায় ভরাট হয়েছে নদী। অন্যদিকে ফারাক্কা বাঁধের কারণে এসব নদীতে উজানের পানি না আসায় দীর্ঘ সময় ধরে  জোয়ারের পানি স্থির হয়ে থাকছে। ফলে অতিরিক্ত পলি জমেও ভরাট হয়ে গেছে নদী-খাল। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি দ্রুত ভাটায় নেমে গিয়ে ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে। হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমির উর্বরা শক্তি। মরে শুকিয়ে যাচ্ছে বাগেরহাটের সবুজ প্রকৃতি। একই সঙ্গে নদী-খাল ভরাট হওয়ার ফলে লবণাক্ততা বেড়ে কৃষি ও পরিবেশের বিপর্যয়ের পাশাপাশি দেশি প্রজাতির মাছ উৎপাদন হ্রাস  পেয়েছে। সরপুঁটি, পাবদা, শিং, মাগুর, ফোলই, খৈলসা, গজাল, চুচড়া, চান্দা, রয়না-ভেদাসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

পুটিমারীতে চাষাাবাদ : বাগেরহাট থেকে রামপাল-মোংলা যাতায়াতসহ নৌবাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম পুটিমারী নদীপথ এখন সরু ড্রেনে পরিণত হয়েছে। বিশ বছর আগেও যে নদীতে চলত লঞ্চ-স্টিমার, সেই নদী এখন ভরাট হয়ে গেছে। নদীর বুকে কাঁচা-পাকা ইমারত তৈরি করে গড়ে উঠেছে বসতি। হচ্ছে চাষাবাদ। অপরিকল্পিতভাবে রেকর্ডীয় খালের বাঁধ ও স্লুুইসগেট আটকে মাছ চাষের কারণে নাব্যতা হারিয়ে মরে গেছে পুটিমারী। প্রায় ২০ কিলোমিটারের এ নদীপথ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বাগেরহাট শহরের দড়াটানা নদী থেকে রামপাল পর্যন্ত প্রমত্ত পুটিমারী নদীর এখন করুণ দশা। বাগেরহাট শহরতলির বিসিক শিল্প এলাকার পেছনে পুটিমারী নদীর সংযোগস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, দড়াটানা নদী ও পুটিমারী নদীর মোহনায় দিয়ে জোয়ারের সময় পানি ঢুকতেই পারছে না। পুটিমারী নদীর অনেক জায়গায় নদীর চিহ্ন পর্যন্ত নেই । দীর্ঘদিন এ নদী খনন না করায় স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও প্রভাবশালী যে যার মতো মরা পুটিমারী নদীর বুকে চিংড়ি  ঘের ও বসতি গড়ে তুলেছেন। বাগেরহাটে অতিরিক্ত পলি জমে শুকিয়ে যাওয়া নদী ড্রেজিং ও খননের বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,  মোংলা বন্দর থেকে ঘষিয়াখালী চ্যানেল হয়ে বন্দরের সঙ্গে সহজ  যোগাযোগের এই রুটটি সচল রাখতে রামপাল উপজেলা সদর হয়ে দাউদখালী নদীতে গত বছর ড্রেজিং করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ভরাট হয়ে যাওয়া অন্য নদীগুলোর ড্রেজিং করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর