বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

উত্তাপ ছড়ানো ভোট

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

উত্তাপ ছড়ানো ভোট

কড়া পাহারায় গতকাল ভারতের সপ্তদশ লোকসভা (সংসদ) নির্বাচনের তৃতীয় পর্বের ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। এ পর্বে ১৫ রাজ্যের ১১৭ আসনে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হয়। তবে  ছিল রাজনৈতিক নেতাদের কথার উত্তাপ। কারণ এ পর্বের জয়-পরাজয়ের উপরই দিল্লির মসনদে বসার ফয়সালা হবে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলায় ভোট কেন্দ্রে তৃণমূল ও কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। গতকাল যেসব আসনে ভোট হয় তার মধ্যে ছিল ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটের ২৬টি আসন। গুজরাটের আহমেদাবাদের রানিপ-এলাকার নিশান উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন তিনি। গতকাল ১৫ রাজ্যের ১১৭ আসনে ভোট হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছেই তৃতীয় দফার ভোট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বিজেপির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি এবার কটি আসন ধরে রাখতে পারে, তার দিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।

ভোট কেন্দ্রে মোদি : প্রধানমন্ত্রী মোদি ভোট দেওয়ার পর কালি লাগানো আঙুলটি সবার সামনে তুলে ধরেন। এর আগে তিনি ২৫ কিলোমিটার দূরের রাইসান গ্রামে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। রাইসান থেকে মোদি একটি হুড খোলা গাড়িতে করে ভোট কেন্দ্রে আসেন। সেখানে তখন আগে থেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের বাইরেই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান অমিত শাহ। গাড়ি থেকে মোদি নামার পরই সেখানে উপস্থিত কয়েক শতাধিক মানুষ মোদি মোদি বলে চিৎকার করতে থাকেন। মোদিও করজোড়ে তাদের অভিবাদন গ্রহণ করেন। লাইনে দাঁড়ানো ভোটাররাও মোদি ধ্বনি দিতে থাকেন। মোদি সেখানে অমিত শাহের নাতনির সঙ্গে খুনসুটি করেন। শেষে মোদি তাকে কোলে তুলে নিজের বাঁ হাত তুলে জয়ের প্রতীক ‘ভি’ দেখান। ভোট দিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মোদি বলেন, ‘আমি খুব সৌভাগ্যবান যে আমার নিজের গুজরাটে এসে আমার কর্তব্য পালন করার সুযোগ পেয়েছি। কুম্ভস্নান করার পর আপনারা যে পবিত্রতা অনুভব করেন, গণতন্ত্রের উৎসবে ভোট দান করেও সে রকম অনুভব করছি।’

সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদীদের অস্ত্র হলো ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), আর গণতন্ত্রের শক্তি হলো ভোটার কার্ড। আমি একটা কথা বলতে পারি যে, ভোটার কার্ড একটা আইইডি থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই আমাদের উচিত ভোটার কার্ডের ক্ষমতা উপলব্ধি করা।’

সকালে গান্ধীনগরে গিয়ে মা হীরাবেনের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেন মোদি। গুজরাটের রীতি মেনে ছেলের কল্যাণে মা-ও একটি শাল, মিষ্টি ও নারকেল উপহার দেন। নিজের হাতে ছেলেকে মিষ্টি খাইয়ে দেন। প্রায় ২০ মিনিট মায়ের সঙ্গে কাটান মোদি।

বালিগ্রামে নিহত ১ : রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে চলমান লোকসভা নির্বাচনে প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটল পশ্চিমবঙ্গে। জীবনে প্রথম ভোট দিতে গিয়ে চোখের সামনেই বাবার মৃত্যু দেখল ১৮ বছর বয়সী ছেলে। মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলার বালিগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৮৮ নম্বর বুথে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী দল জাতীয় কংগ্রেসের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে মৃত্যু হয় আবদুল কালাম টিয়ারুল শেখ নামে এক কংগ্রেস কর্মীর। আহত হন আরও দুজন। এর মধ্যে একজন টিয়ারুলের ছেলে, অন্যজন তৃণমূল কর্মী।

জানা গেছে, এদিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন টিয়ারুল শেখ। সে সময় কংগ্রেস ও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। বাঁশ, লাঠি ও হাঁসুয়া (লম্বা দা) নিয়ে একে অন্যের ওপর চড়াও হয়। পরে সেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বুথের বাইরেও। এর মধ্যেই বাঁশ ও লাঠির হামলায় গুরুতর জখম হন টিয়ারুল। রক্তাক্ত টিয়ারুলকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে বহরমপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন টিয়ারুলের ছেলে। সূত্র জানান, সকাল থেকেই ওই বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়াসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। সে খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসে অতিরিক্ত পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু বাহিনী চলে যেতেই দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

 নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার সময় অস্ত্রধারী নিরাপত্তা বাহিনী থাকলেও তা থামাতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

এদিকে, মৃত্যুর ঘটনায় জেলা কমিশনের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ঘটনায় আটক করা হয়েছে চারজনকে।

অন্য একটি ঘটনায় দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে নিজের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় এক পোলিং এজেন্টকে। যদিও মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে।

তৃতীয় পর্বে পশ্চিমবঙ্গে পাঁচটি লোকসভা আসনে ভোট নেওয়া হয়। এগুলো হলো- বালুরঘাট, মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ।

সকালের দিকে বুথ দখলকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার মানিকনগর গ্রামে তৃণমূল ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে তিন তৃণমূল কর্মী আহত হন। তাদের ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়।

এ পর্বে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিই বিরোধীদের দখলে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ ও জঙ্গিপুর কেন্দ্রে জয় পায় কংগ্রেস, মুর্শিদাবাদে জয়ী হয় সিপিআইএম। একমাত্র বালুরঘাট লোকসভা আসনটিতে জয় পায় তৃণমূল। কিন্তু এবার মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে ঘাসফুল (তৃণমূলের প্রতীক) ফোটানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দলনেত্রী মমতা ব্যনার্জি।

অন্যদিকে, প্রবল গরমে দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে দুজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে কর্তব্যরত অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া এক পোলিং কর্মকর্তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়।

এ পর্বে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আছেন কংগ্রেস ও বিজেপির মতো দুটি বড় রাজনৈতিক বড় দলের সর্বভারতীয় সভাপতি। এবারই প্রথম লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। গুজরাটের গান্ধীনগর কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন অমিত, অন্যদিকে কেরালার ওয়ানাঢ় আসনে প্রার্থী হয়েছেন রাহুল। এ ছাড়া উত্তরপ্রদেশের মঈনপুরী কেন্দ্রে সমাজবাদী পার্টি (সপা) প্রধান মুলায়ম সিং যাদব, এ রাজ্যেরই রামপুর কেন্দ্রে সপা নেতা আজম খান ও বিজেপির জয়াপ্রদা, বিহারের মাধেপুরা কেন্দ্র থেকে লোকতান্ত্রিক জনতা দলের নেতা শারদ যাদব, কেরালার তিরুবন্তপুরম কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী শশী থারুর, জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগ কেন্দ্রে পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি, উড়িষ্যার পুরী কেন্দ্রে বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র, পিলভিট কেন্দ্রে বিজেপির বরুণ গান্ধী, বেরিলি থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ কুমার গাঙ্গোয়ার, কর্ণপাটকের কালাবুরাগি কেন্দ্রে মল্লিকার্জুন খাড়গের মতো প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেল।

বিজেপিতে যোগ দিলেন সানি দেউল : দেশজুড়ে যখন ভোট গ্রহণ পর্ব চলছে, ঠিক তখনই গতকাল বিজেপিতে যোগ দিলেন বলিউডের অভিনেতা সানি দেউল। ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনীর পর একই পরিবার থেকে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখালেন সানি। দলে যোগদানের পরই সানি জানান, ‘আমি আমার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। তিনি যেমন অটল বিহারি বাজপেয়ি সরকারে আমলে যোগ দেন, আমি তেমন মোদি সরকারের আমলে দলে যোগ দিলাম। মোদিজি দেশের জন্য অনেক কাজ করেছেন এবং আমি আশা করি আগামী পাঁচ বছরের জন্যও মোদিজি দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রাখেন।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর