শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

মেট্রোরেল হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা

রাজধানীর মিরপুর-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশানকে যুক্ত করবে পাতাল রেল, প্রস্তাবিত ব্যয় ৪১ হাজার কোটি টাকা, এক হাজার কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত আরও একটি মেট্রোরেল রুট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেটির ভূমি অধিগ্রহণের জন্য আগামী বাজেটে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এমআরটি লাইন-৫ (নর্দান রুট) শীর্ষক প্রস্তাবিত এ রুটে মোট ১৪টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে ৯টি স্টেশন হবে আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থাৎ মাটির নিচে। ৫টি স্টেশন থাকবে মাটির ওপরে। প্রস্তাবিত স্টেশনগুলো হচ্ছে- হেমায়েতপুর, বালিয়াপুর, মধুমতি, আমিনবাজার, গাবতলী, দারুস সালাম, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২, নতুনবাজার, ভাটারা। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা জানান, হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ রুটটির ১৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার হবে পাতাল রুট; বাকি ৬ কিলোমিটার হবে এলিভেটেড রুট। ২০২৭ সালের মধ্যে এ রুট নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা। সময়মতো প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আগামী জুনের মধ্যেই ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করতে চাইছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা।

প্রস্তাবিত রুটের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জরুরি বরাদ্দ চেয়ে ১১ মার্চ অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-৫-নর্থ) প্রকল্প পরিচালক আফতাবউদ্দিন তালুকদার। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, এমআরটি লাইন-৫ নর্থ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রস্তাব) গত ডিসেম্বরে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পটি একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ডিপিপি অনুমোদনের পরপরই সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এ জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব খাতে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। প্রকল্পের বিপরীতে বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য গত বাজেটেও বরাদ্দ ছিল। আগামী বাজেটেও বরাদ্দ রাখা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করার। তাই এ ধরনের প্রকল্পে অর্থ কোনো সমস্যা হবে না। প্রয়োজনে অন্য খাত থেকে এনে দেওয়া হবে। ঢাকা মহানগরী ও সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে এবং পরিবেশ উন্নয়নে আধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ডিএমটিসিএল গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচটি এমআরটি বা মেট্রোরেল রুট নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে এমআরটি লাইন-৬-এর কাজ চলছে, যা বাস্তবায়িত হলে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এলিভেটেড রেল যোগাযোগ চালু হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই এলিভেটেড মেট্রোরেলের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে এমআরটি-৫ (নর্দান) রুটের ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, এমআরটি-৬ প্রকল্পের মতো এ প্রকল্পটিও জাপানের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়িত হবে। জাইকা এরই মধ্যে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমে সংযোগ সৃষ্টিকারী এ মেট্রোরেল আমিনবাজার-গাবতলী দিয়ে মিরপুর পর্যন্ত আসার পর এটি মাটির নিচ দিয়ে রাজধানীর মিরপুর থেকে কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান, নতুনবাজার হয়ে ভূগর্ভস্থ পাতাল রুটে ভাটারা পর্যন্ত সংযোগ তৈরি করবে। রাজধানীর কেন্দ্রীয় অংশে যানজট নিরসনে ওই অংশটুকু মাটির নিচ দিয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির বিবরণে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর) প্রকল্পটি মাটির ওপর (এলিভেটেড) এবং মাটির নিচ দিয়ে (ভূগর্ভস্থ) স্থাপিত হবে। পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত এমআরটি লাইন-৫ হেমায়েতপুর থেকে দারুস সালাম সড়ক, মিরপুর সড়ক, বনানী সেনানিবাস এবং মাদানী এভিনিউ হয়ে ভাটারা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। ১৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভূগর্ভস্থ অংশটি ঢাকা কেন্দ্রীয় অংশের জন্য পরিকল্পনা করা হয় এবং ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট রেল সেতু কাঠামোটি উপশহর এলাকায় জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। ডিএমটিসিএলের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর খান মো. মিজানুল ইসলাম সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে আমাদের প্রথম লাইনটি (এমআরটি লাইন-৬) ছাড়া আর বাকি যে লাইনগুলো হবে, এর সবই আন্ডারগ্রাউন্ড, অর্থাৎ মাটির নিচ দিয়ে পাতাল রেল রুট থাকবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর