শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্ল্যাটফরম যখন ফেসবুক

মির্জা মেহেদী তমাল

প্ল্যাটফরম যখন ফেসবুক

ফেসবুকে রিকোয়েস্ট। মেসেঞ্জারে হাই, হ্যালো। এক দিন, দুই দিন করে শুরু হয় পরিচয়। গড়ে ওঠে সম্পর্ক। চাওয়া হয় মোবাইল ফোন নম্বর। ফোনেও শুরু হয় টুকটাক কথা বলা। আস্তে আস্তে কাছে আসা। দেখা করা। চলে আলাপচারিতা ও খাওয়া-দাওয়া। কিছুদিন এখানে-সেখানে। এরপর শুরু হয় বিভিন্নভাবে জিম্মি। অজ্ঞান, অপহরণও করা হয়। এরপর হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। এভাবেই ফেসবুক এখন অপরাধীদের প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, না জেনে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়া উচিত নয়, কোনো সম্পর্কে যাওয়া যাবে না। যার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত হতে যাচ্ছেন তাকে সঠিকভাবে জানতে হবে। এমনকি তার ঠিকানা নিশ্চিত হতে হবে। ব্যত্যয় হলেই বিপাকে পড়তে হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়া-প্রবাসী মাইনুল ইসলাম। নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাস করছেন। সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় একই এলাকার তরুণী শিউলির (ছদ্মনাম) সঙ্গে। প্রবাসজীবন, তার ওপর একই এলাকার তরুণী হওয়ায় ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চান মাইনুল। সাড়া দেন শিউলিও। এভাবেই কিছুদিন চলতে থাকে। একপর্যায়ে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। সুন্দরী হওয়ার সুবাদে মাইনুলের আগ্রহ ছিল শিউলির চেয়ে একটু বেশি। ঘনিষ্ঠতা এত বেড়ে যায় যে ভার্চুয়াল দেখা আর কথা বলা ভালো লাগে না মাইনুলের। চলে আসেন বাংলাদেশে। আর দেশে এসে সামনাসামনি দেখায় মুগ্ধ হন তিনি। অপেক্ষার পালা শেষ করতেই দিয়ে দেন বিয়ের প্রস্তাব। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হন শিউলিও। প্রবাসী মাইনুলের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে বিয়ের মোহরানা ধার্য হয় ১০ লাখ টাকা। ঘরোয়া আয়োজনেই বিয়ে হয় মাইনুল ও শিউলির। বিয়ের সপ্তাহ না পেরোতেই মাইনুলের সন্দেহ হয় শিউলিকে। একপর্যায়ে মাইনুল বুঝতে পারেন বড় ধরনের এক ফাঁদে পড়ে গেছেন তিনি। বিয়ের আগে শিউলি নিজেকে অবিবাহিত বললেও মাইনুল জেনে যান শিউলি এর আগেও একইভাবে আরেকজনকে বিয়ে করেছিলেন। সে সংসারে তার এক ছেলেও রয়েছে। আর সে বিয়েটাও একই কায়দায়। এরপর শিউলিকে ডিভোর্স দিয়ে দেন মাইনুল। পরে দুই পরিবারের সমঝোতায় ৮ লাখ টাকায় রফা হয়।

গত ৩ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর-১০ থেকে অপহরণ করা হয় ডা. মোনায়েমুল বাশার (৪০) নামে এক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে। অভিযোগ পেয়ে ৪ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৬টার দিকে অভিযান চালিয়ে নগদ ২৭ হাজার ৫০০ টাকাসহ অপহরণকারী চক্রের ছয় সদস্যকে আটক ও ভিকটিমকে উদ্ধার করেন র‌্যাব-৪ এর সদস্যরা। একইভাবে ১২ এপ্রিল কলাবাগান থেকে অপহৃত হন মো. রায়হান নামে এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ নেয় অপহরণকারীরা। অপহরণের ছয় দিন পর (১৭ এপ্রিল) রায়হানকে সাভারের আমিনবাজার থেকে উদ্ধার করে র‌্যাব। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় অপহরণকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে। র‌্যাব-৪-এর সিপিসি-১-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর কাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমিনবাজার থেকে যে চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা একজন নারীকে ব্যবহার করে ফাঁদ পাতত। এরপর দেখা করার কথা বলে, টার্গেটেড ব্যক্তিকে সুবিধামতো স্থানে নিয়ে যেত তারা। পরে অপহরণ করে আগে থেকে ঠিক করে রাখা বাসায় নিয়ে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করত।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরিচিত কারও সঙ্গে পরিচিত হতে হলে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে পরিচিত হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। না হয় এ ধরনের প্রতারণা ও অপহরণের ঘটনা ঘটতে থাকবে। প্রতারকদের কৌশল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডিজিটাল মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এর সদ্ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর