শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফেলনা জিনিস থেকে কর্মসংস্থান পাঁচ হাজার মানুষের

সাইফুল ইসলাম, যশোর

ফেলনা জিনিস থেকে কর্মসংস্থান পাঁচ হাজার মানুষের

ফেলনা নয় রাস্তাঘাট-ডাস্টবিন কিংবা ড্রেনে পড়ে থাকা প্লাস্টিক, কাচের বোতল, নারকেলের মালাসহ অনেক কিছু। কারণ এসব ফেলনা থেকে বছরে ১২ কোটি টাকার ব্যবসা করছে যশোরের ফারদিন প্লাস্টিক অ্যান্ড গ্লাস হাউজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব ফেলনা জিনিস বড় একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংগ্রহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। তারপর সেগুলো প্রসেস করে দেশে-বিদেশে বিক্রি করছে। শুধু এইটুকু করেই প্রতিষ্ঠানের বছরে আয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। আর এ প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে যশোর অঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার হতদরিদ্র নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। যশোর শহরের শংকরপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে ফারদিন প্লাস্টিক অ্যান্ড গ্লাস হাউজ। প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক, কাচের বোতল আর নারকেলে মালার স্তূপ রাখা হয়েছে চারপাশে। প্রায় ৫০/৬০ জন কর্মী এসব স্তূপ থেকে বোতল বাছাই করে পরিষ্কার করছে। তারপর তা একটি মেশিনের ভিতরে দিচ্ছে। মেশিনে বোতলগুলো টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার পর সেগুলো আরেকটি যন্ত্রে ঢুকিয়ে রাসায়নিক মিশ্রিত পানি দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। পরে আরেকটি যন্ত্রে ঢুকিয়ে ভেজা টুকরোগুলো শুকানো হচ্ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে এই কর্মযজ্ঞ।  প্রতিষ্ঠানটির মালিক আশরাফুল হাসান বিপ্লব বলেন, ‘যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন শহর, বাজার, গ্রাম থেকে হতদরিদ্র নারী-পুরুষ ও ফেরিওয়ালারা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের ও কাচের বোতল সংগ্রহ করে মহাজনদের কাছে বিক্রি করে। মহাজনরা পরে সেগুলো আমাদের কাছে বিক্রি করে। প্রতি মাসে ১ কোটি টাকার মতো এসব জিনিস কেনা-বেচা হয়। আমার কারখানায় প্রায় ৫০/৬০ জন কর্মী কাজ করে।

আর মহাজন, ফেরিওয়ালা, দরিদ্র নারী-পুরুষ মিলিয়ে মাঠ পর্যায়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ এ কাজের সঙ্গে জড়িত’। তিনি আরও বলেন, ‘প্লাস্টিকগুলো প্রসেস করে বিভিন্ন প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিতে বিক্রি করা হয়। আর কাচের জিনিস কিনে নেয় বিভিন্ন কাচ ফ্যাক্টরি। নারকেলের মালা পাউডার বানিয়ে বিক্রি করা হয় ঈগল, এসিআইসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে। প্লাস্টিকের এসব কুচি বিদেশেও রপ্তানি হয়’। বিপ্লব বলেন, ‘মালয়েশিয়া, চীন, ভারতে প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম বোতলের প্রচুর চাহিদা। সরকারি সহায়তা এবং ব্যাংকের ঋণ পেলে প্লাস্টিকের একটি বড় কারখানা ও নারকেলের মালা দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির কারখানা গড়ে তোলার চেষ্টা করব। এ ব্যাপারে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চেষ্টাও করছি’। বিপ্লবের প্লাস্টিক কারখানায় সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন। তিনি বলেন, ‘এর আগে আমাদের ছোট একটি ভাঙ্গাড়ির দোকান ছিল। কিন্তু তা দিয়ে সংসার চলত না। পরে একটি এনজিও থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আমরা এই ব্যবসা শুরু করি। পরে আবারও ঋণ নিয়ে ব্যবসাটা এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এখন আমাদের কারখানায় ৩০ জন মহিলা শ্রমিকসহ প্রায় ৬০ জন কর্মী কাজ করছে। এদের সবাই হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য।’ বেনাপোল কাস্টমস সূত্র জানায়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা মূল্যের ৬ হাজার ৯৩৪ মেট্রিক টন প্লাস্টিকের পুরনো বোতল-কুচি ভারতে রপ্তানি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েও ভারত, তুরস্ক, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও কোরিয়ায় যাচ্ছে এসব প্লাস্টিকের কুচি। ফেলনা জিনিসের এমন ব্যবহারে একদিকে যেমন পরিবেশ ঠিক থাকছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে, তেমনি আসছে বৈদেশিক মুদ্রাও।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর