শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাতিসংঘের দায় বর্ষায় রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি হলে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, আগামী বর্ষায় কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ভূমিধসসহ অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারালে দায় নেবে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো। এ জন্য বাংলাদেশ দায়ী থাকবে না।

গতকাল সকালে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অ্যান্টনিও ভিটোরিনো এবং জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোককের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বৈঠকের পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বলেছি, আমরা কিছু লোককে ভাসানচরে নিয়ে যেতে চাই। কারণ আগামী বর্ষা মৌসুমে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হবে। এ সময় ভূমিধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। আর প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে আমরা দায়ী থাকব না। যারা বাধা দিচ্ছে তারা এর জন্য দায়ী থাকবে। ভাসানচরে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচে রোহিঙ্গাদের জন্য সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। তবে জাতিসংঘসহ আরও কয়েকটি পশ্চিমা দেশ রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তরে বাধা দিচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা জোর করে কাউকে ভাসানচরে নেব না। তবে যারা যাবে তাদের জন্য একটি ভালো অবস্থান হবে। আমরা নিজের পয়সায় ভাসানচরে আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। ওখানে গেলে রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক কাজকর্ম করতে পারবে। মাছ ধরতে পারবে, গরু পালন করতে পারবে। সাক্ষাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের তিন সংস্থার প্রধানকে বাংলাদেশে কাজ কমিয়ে মিয়ানমারে কাজ বাড়ানোর তাগিদ দেন।

মন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি, আপনাদের এখানে কাজ নেই। মিয়ানমারে যান। আমি বেশ শক্তভাবে বলেছি। বলেছি, আপনারা ওখানে বেশি জোর দেন। আমি জিজ্ঞাসা করেছি আপনারা কতবার সেখানে গেছেন। সেখানে আপনাদের কত লোক কাজ করে। এখানে এক হাজারের বেশি লোক কাজ করে। ওখানে বেশি কাজ করেন। এখান থেকে বিদায় হোন। আপনারা মিয়ানমারকে কনভিন্স করেন, যাতে তারা তাদের লোক নিয়ে যায় এবং ওখানে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করেন। রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে ঝামেলা তৈরি করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, স্থানীয় জনগণ খুব আপসেট যে তারা দিনে দিনে ঝামেলার সৃষ্টি করছে।

আমরা বলেছি, ওদের সংখ্যা এত যে তারা আমাদের বনজঙ্গল সব উজাড় করে দিচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের অনেক বাচ্চা আছে এবং তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা হওয়া উচিত। কিন্তু উচিত হবে তাদের মিয়ানমারের ভাষা শেখা ও মিয়ানমারের ইতিহাস জানা। আমাদের এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। সুতরাং তাদের ফেরত যাওয়া উচিত এবং সেখানে তারা শিক্ষা গ্রহণ করুক। পররাষ্ট্রন্ত্রী তিন সংস্থার প্রধানকে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বিশ্ব জনমত তৈরির আহ্বান জনান। মন্ত্রী বলেন, এত বড় সংস্থার প্রধান আপনারা এবং আপনারা বিশ্বব্যপী জনমত তৈরি করতে পারেন। আমার ধারণা, জনমত তৈরি করতে পারলে সবচেয়ে বড় অত্যাচারী শাসকেরও পতন হয়। মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে ও অপরাধ সংঘটিত করেছে তার দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। আমরা তাদের বলেছি, ‘আপনাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ যেমন- জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলেন মিয়ানমারকে চাপ দিতে। কারণ মিয়ানমারের বেশিরভাগ ব্যবসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে। জাপান সেখানে বিনিয়োগ করেই চলেছে। ব্যাংকিং চালায় সিঙ্গাপুর। আপনারা সেখানে চাপ দিলে তারা মিয়ানমারকে চাপ দেবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য।’ মন্ত্রী বলেন, সমস্যা মিয়ানমার তৈরি করেছে, সমাধানও তাদের করতে হবে। আমরা যুদ্ধ করব না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চাই। আমাকে কেউ কেউ বলেছে তোমরা যদি চাও তবে আমরা সেখানে কিছু একটা মহড়া করতে পারি। এরা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত পাওয়ারফুল দেশ। আমরা খুব একটা পাত্তা দেইনি। তারা বলেছেন, তোমরা চাইলে আমরা তোমাদের হয়ে ক্ষমতা দেখাতে পারি। আমরা বলেছি না, কারণ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চাই। মিয়ানমার এর আগে লোক নিয়ে গেছে এবং আমরা আশাবাদী।’ মন্ত্রী আরও বলেন, সমস্যার দ্রুত সমাধান না করা গেলে রোহিঙ্গা যুবকরা উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। এখানে উগ্রবাদ হলে গোটা অঞ্চলের জন্য খারাপ হবে বলে হুঁশিয়ার করেছি। এটা হলে মিয়ানমারের দুঃখ আছে। তখন চীনের উদ্দেশ্যও সফল হবে না। অর্থনৈতিক কোনো কাজ হবে না। তিন সংস্থার প্রধানকে মন্ত্রী রাখাইনে কারা অস্ত্র সরবরাহ করছে সেটি খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এর ফলে কে বা কারা এর পেছনে আছে আমরা তা জানতে পারব। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে এবং বিভিন্ন তথ্য আমরা পাই। কিন্তু মিডিয়াতে কখনো আসে না অস্ত্র কোন দেশের  তৈরি, কোন কোম্পানির তৈরি বুলেটে মারা গেছে। এখন এটি জানার সময়, কারা এসব অস্ত্র সরবরাহ করছে। এগুলো জানা গেলে সন্ত্রাস কমে যাবে। তিন দিনের সফরে গত বুধবার ঢাকায় আসা জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অ্যান্টনিও ভিটোরিনো এবং জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক গতকাল রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার গেছেন। এর আগে বুধবার তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আজ তারা সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর