শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
ফার্মগেটে আবাসিক হোটেলে দুই শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু

২৩ দিনেও হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

রাজধানীর ফার্মগেটে আবাসিক হোটেল থেকে দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার ২৩ দিনেও হত্যার রহস্য উদ্্ঘাটন হয়নি। নিহত দুই শিক্ষার্থীর একজন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হরিপুর গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে আমিনুল ইসলাম সজল। সজলের বাবার দাবি, সজলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় নিলে সজলের মৃত্যুর রহস্য বের হবে। ২ এপ্রিল ফার্মগেটের আবাসিক হোটেল সম্রাটের ৮০৮ নম্বর কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র আমিনুল ইসলাম সজল (২২) ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মরিয়ম চৌধুরীর (২০) মরদেহ। সজলের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট পৌর এলাকার হরিপুর গ্রামে। মরিয়মের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলায়। লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ ও হোটেল কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে জানায়, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করে দুজন মারা গেছে। সজলের পকেটে ডুমেক্স-৬০ নামে দুটি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট পাওয়া গেছে। তা দেখেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় পুলিশ। পুলিশের করা সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুজনের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আত্মহত্যাও করেননি তারা। তবে চিকিৎসকদের দাবি, এই ট্যাবলেট সেবনে কোনো পুরুষ মারা যেতে পারে না। এ ছাড়া নারীর এই ট্যাবলেট সেবনের কথা নয়। সজলের বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, তিনি নাঙ্গলকোট বাজারে রেডিমেড কাপড়ের ব্যবসা করেন। ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে তাদের কোনো শত্রু নেই। তিনি বলেন, ‘সজল-মরিয়ম স্বামী-স্ত্রী ছিল না। তাহলে তাদের কী পরিচয়ে সেখানে কক্ষ ভাড়া দিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ? হোটেল কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় নিলে সজলের মৃত্যুর রহস্য বের হবে। তার ধারণা, সজলকে অন্য কোথাও হত্যা করে এখানে এনে লাশ ফেলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তার চার ছেলে। সজল তৃতীয়। ছোটবেলা থেকে সজল একটু ভীতু ধরনের। সব সময় সে ঝামেলা এড়িয়ে চলত। এলাকায় কখনো কারও সঙ্গে বিবাদে জড়ায়নি। তাকে কখনো একটি থাপ্পড় দিয়েও শাসন করতে হয়নি। কোনো রাজনীতি, উচ্ছৃঙ্খলতা কিংবা মাদকের সঙ্গেও সে জড়িত ছিল না। সজল তার মায়ের সঙ্গে অনেক ফ্রি ছিল। কোনো মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এমন কিছু কখনো তার মাকে বলেনি সে। ৩ এপ্রিল তার বাড়িতে আসার কথা ছিল। কথা ছিল রোজার মাসে বাড়িতে থাকবে। কিন্তু সে বাড়িতে এলো লাশ হয়ে। ৩ এপ্রিল তার লাশ আমার পৈতৃক বাড়ি উপজেলার আঞ্জিয়াপাড়ায় দাফন করেছি। সজল কুমিল্লা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে সে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তৃতীয় বর্ষে পড়ছিল।’ তিনি  বলেন, ‘আমরা পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। গত ২৩ দিনে তারা একটা ফোন দিয়েও খোঁজ নেয়নি। আমরা ফোন দিলে বলে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা এখনো একটি মামলা পর্যন্ত নেয়নি। তারা বলে, কার বিরুদ্ধে মামলা করবেন। তারা যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটের কথা বলে বিষয়টি আড়াল করতে চাইছে। তারা হোটেল কর্তৃপক্ষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।’ ছেলে হত্যার বিচারের জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন তিনি। তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে হত্যা, নাকি অপমৃত্যু। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর