শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অচল, অনশনে অসুস্থ চার শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

উপাচার্যের অপসারণের এক দফা দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন চারজন শিক্ষার্থী। শারীরিক ও পড়াশোনার ক্ষতি জেনেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বুধবার প্রথম দিন রাত থেকেই অনশনে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। তারাও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। দাবি জোরাল করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক (প্রক্টর-প্রভোস্ট) অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ৫২ জন শিক্ষক। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও উপাচার্যের অপসারণ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। এই উপাচার্যের সঙ্গে আর কোনো ধরনের কার্যক্রমে অংশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। টানা অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাদের স্যালাইন পুশ করে সুস্থ রাখার চেষ্টা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা। আন্দোলনের ফলে শারীরিক ও লেখাপড়ার ক্ষতি জেনেও উপাচার্যের অপসারণ ছাড়া ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন তারা। শিক্ষার্থী তনুশ্রী ভট্টাচার্য, মো. লোকমান হোসেন, আল আমিন, মো. শফিকুল ইসলাম এবং মহিউদ্দিন আহমেদ শিফাতকে প্রশ্ন করা হয় তাদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে কি না? জবাবে তারা বলেন, রাষ্ট্র কি এসব দেখছে না? ৮ হাজার শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর, নাকি একজন উপাচার্যের স্বার্থরক্ষা করা হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের সন্তানতুল্য উল্লেখ করে তাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে বুধবার রাত থেকেই শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। উপাচার্যের প্রতি অনীহা দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২ জন শিক্ষক বিভিন্ন প্রশাসনিক পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থী আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম এবং তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বনি আমিন বলেন, এই উপাচার্য স্বৈরাচার। তারা তার সঙ্গে আর কোনো কাজে অংশ নিতে চান না। তাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তারাও একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। এক মাস ধরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়ছেন আশঙ্কা করে ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. আরিফ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির উচিত দ্রুত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। এ বিষয়ে ঢাকায় অবস্থানরত উপাচার্যের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির সদস্য বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস বলেন, উপাচার্য ১৫ দিনের ছুটির আবেদন করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তার অবশিষ্ট মেয়াদ (২৭ মে) পর্যন্ত একটি ছুটির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আবেদনটি অগ্রগামী করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগতে পারে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এটা বুঝতে চাইছেন না। তারা চান প্রধানমন্ত্রীর নিজের মুখে ঘোষণা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর