শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

সিরাজগঞ্জে হাজার বছরের প্রাচীন নগরের সন্ধান

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জে হাজার বছরের প্রাচীন নগরের সন্ধান

জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের ক্ষিরিতলা এলাকায় হাজার বছরের প্রাচীন বিরাট রাজার শহর ও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পেয়েছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও  বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার তারা ক্ষিরিতলা ও আশপাশের গ্রামগুলোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাচীন নিদর্শনগুলো খুঁজে পান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, ১৯৯০ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ জেলা গেজেটিয়ার পাবনা সূত্রমতে নিমগাছিকে মহাভারতে বর্ণিত বিরাট রাজার শহর বলে অভিহিত করা হয়। গেজেটিয়ারে উল্লেখ আছে- ‘প্রাচীন করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে প্রায় ৮ বর্গমাইল আয়তনের একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে এ গ্রামগুলোতে। ঢিবিগুলোর ভিতরে প্রচুর পাথর আর প্রাচীনকালের ইট রয়েছে।’ মঙ্গলবার সরেজমিন ক্ষিরিতলা গ্রামে দেখা যায়, একটা বড় ঢিবি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয়ভাবে ঢিবিকে ‘বুরুজ’ বলা হয় এবং একইসঙ্গে এলাকার মানুষ একে রাজার বাড়ি বলে অভিহিত করেন। সেই ঢিবিতে প্রাচীনকালের ইটনির্মিত স্থাপনার ভগ্নাংশ এখনো দৃশ্যমান। ঢিবিটির সঙ্গেই কৃষিজমিতে হাঁটলেই প্রচুর মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ চোখে পড়ে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, জমি খুঁড়লেই মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ মাটির নিচ থেকে বের হয়ে আসে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা ঢিবি ও আশপাশের প্রত্নস্থল থেকে সংগ্রহ করে বাড়ি তৈরি করেছেন। এ ছাড়া নিমগাছি বাজার থেকে জয়সাগরের দিকে এগিয়ে গেলে আরেকটি লোকালয় আছে যা ছোট আকারের একটি ঢিবির ওপরই গড়ে উঠেছে। এখানেও ইট ও মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশসহ পাথরের ব্যবহার লক্ষণীয়। প্রত্নতাত্ত্বিক আবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারিয়া তার ‘বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, মহাভারতে বর্ণিত মৎস্য দেশের রাজা বিরাটের রাজপ্রাসাদ ছিল নিমগাছিতে। জাকারিয়ার ভাষ্যমতে, পা বেরা অজ্ঞাতবাসে থাকাকালে এখানে নাকি আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। রাজবাড়ির ঢিবিতে প্রাপ্ত ও স্থানীয় হাইস্কুলে রক্ষিত তিনটি পোড়ামাটির চিত্রফলক দেখে ধারণা করা হয়, এগুলো খুব সম্ভবত গুপ্ত-পরবর্তী যুগের। এখানে প্রায় ৫০টি ঢিবির মধ্যে লুক্কায়িত আছে মন্দির ও স্তূপাদির ধ্বংসাবশেষ। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক মো. রিফাত-উর-রহমান ধামাইনগর ও সোনাখাড়া ইউনিয়নের গ্রামগুলোয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এবং অনুসন্ধান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় মো. রিফাত-উর-রহমান জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলায় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এবং অনুসন্ধান করে ইটের নমুনা, মৃৎপাত্রের টুকরা ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করেন। জরিপ করে লক্ষ্য করা গেছে, ঐতিহাসিক সূত্রের সঙ্গে ধামাইনগর ইউনিয়নের বর্তমান প্রত্নতাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটের বেশকিছু সামঞ্জস্য রয়েছে। যদিও মাত্র একটি বড় ঢিবি কোনোভাবে টিকে আছে। সেই ঢিবিসহ আশপাশের গ্রামগুলোয় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার এখনো যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। মৃৎপাত্রের টুকরা ও ইটগুলোর নির্মাণশৈলী থেকে এটি ধারণা করা যায় যে, সেগুলো পাল শাসকদের সময় নির্মিত। মো. রিফাত-উর-রহমান জানান, মাঠ প্রত্নতত্ত্বের প্রথম ধাপ হিসেবে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধানের কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর