সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

বামপন্থিদের সম্পর্কে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে

-মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

বামপন্থিদের সম্পর্কে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘বাংলাদেশে সব গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে বামপন্থিরা। গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন,হকার, সুন্দরবন রক্ষা, পরিবেশ ধ্বংস করে পারমাণবিক বিদ্যুৎবিরোধী আন্দোলন, প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষা, নারী নির্যাতন-নিপীড়নবিরোধী যে কোনো আন্দোলনের নেতৃত্ব বামপন্থিরাই দিচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রশ্নে ক্ষমতার সমীকরণের রূপান্তর  করে বামপন্থিরা কোনো প্রভাব রাখতে পারেনি। এ জন্য ব্যর্থতা রয়েছে এটা ঠিক, তবে লুটেরা শাসকগোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে বামপন্থিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলছে, বামপন্থিরা কোনো দৃশ্যপটে নেই, তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। জনগণের কাছে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে বামপন্থিদের সম্পর্কে ভুল ধারণা তুলে ধরা হচ্ছে। এটা যেমন রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হচ্ছে, তেমনি ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট লুটেরা পুঁজিপতি, সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রকারীরা করছে।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম শনিবার এসব কথা বলেন। সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ বামপন্থিরাই। তাদের নেতৃত্ব ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে দ্বিদলীয় মেরুকরণের যে রাজনীতি, এর চূড়ান্ত দেউলিয়াপনা প্রমাণিত হয়ে গেছে। দ্বিদলীয় মেরুকরণের ভবিষ্যৎ রাজনীতি যারা নির্ধারণ করেছেন, তারাও চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এটাও এখন প্রমাণিত। যারা বলছেন, এই দুই দলই ক্ষমতায় আসবে, তারাই নেতৃত্ব দেবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখছি। সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা উভয়ে মিলে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় একমাত্র বামপন্থিরাই দিচ্ছে। বাংলাদেশে এখন বড় দুই দল ও তাদের সংশ্লিষ্টরা রাজনীতি করছেন লুটপাটের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে। জনগণের চোখ ভিন্ন দিকে রাখতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি উসকে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নীতি-আদর্শের রাজনীতি একমাত্র বামপন্থিরা যে করছে জনগণের সামনে তাও প্রমাণিত। প্রবল প্রতিরোধের মধ্যেও নীতি-আদর্শের রাজনীতির ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ কিংবা বামপন্থি ও অন্য গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলো এগিয়ে আছে।

নীতি-আদর্শের রাজনীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও ক্ষমতার সমীকরণে কেন বামপন্থিরা নেই এটি একটি বড় প্রশ্ন। এ জন্য বামপন্থিদের ব্যর্থতা রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বামপন্থি রাজনীতির নানা সংকট রয়েছে। এই সংকটের একটি বড় অংশ হচ্ছে, বামপন্থিরা জনগণকে একই দৃষ্টিসীমার মধ্যে আনতে পারে না। সংকীর্ণ জায়গায় তারা ঘুরপাক খাচ্ছে। জনগণের নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতার ক্ষেত্রে তাদের দুর্বলতা রয়েছে। তৃণমূলের জায়গা থেকে বামপন্থিরা নীতিনির্ধারণ করতে পারছে না। অনেকটা ওপর থেকে রাজনীতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু ওপর থেকে রাজনীতি চাপিয়ে সংগঠন গড়ে তোলা যাবে না। তেমনি রাজনীতির এই দুর্দশাও কাটানো যাবে না। সেলিম বলেন, তাহলে এর বিকল্প কী? বা বামপন্থিদের ভবিষ্যৎ কী? ভবিষ্যৎ হচ্ছে, সারা দেশের মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ, অনিয়ম, দুর্নীতি, দুঃশাসন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে এটা এক সময় এর বিস্ফোরণ হবে। এই বিস্ফোরণ যে কোনো সময় হতে পারে। সেটি রাজনৈতিক ঘটনা দিয়ে হবে এমনটি নাও হতে পারে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কিংবা যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধেও সংগঠিত হতে পারে। দুই দল ও তাদের সংশ্লিষ্ট লুটেরা দলগুলোর বিরুদ্ধেই মানুষ জেগে উঠবে। যেহেতু গণমানুষের সব আন্দোলন করছে বামপন্থিরা, এই জনবিস্ফোরণের নেতৃত্বও বামপন্থিরাই দেবে। জনগণ তাদেরই বেছে নেবেন। কারণ এটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। নাগরিক সমাজ, এনজিও বিভিন্ন নামে দ্বিদলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে যে বিকল্প কথা প্রচার করে, সেটিও জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তারা এটিও প্রচার করে, বামপন্থিদের আন্দোলনে লোক নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন, সেই মিছিলেও লোক হতো না। কিন্তু ঊনসত্তরে ১১ দফার পরে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭০ সালে নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকে বেছে নিয়েছিলেন। তাই জনগণ সময়মতো সঠিক দলকেই বেছে নেবেন।

সর্বশেষ খবর