সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

সংস্কারপন্থিদের চাপে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব

দলের ভাঙন ঠেকাতে চলছে দেশ-বিদেশে সফর

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

দলের অভ্যন্তরে সংস্কারপন্থিদের চাপে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত ও জামায়াতে ইসলামী থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে দল গঠন প্রতিক্রিয়ার আত্মপ্রকাশ আনুষ্ঠানিক ঘটেছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন দলের নাম, গঠনতন্ত্রসহ দলের যাত্রা শুরু হবে। এই দলে জামায়াতের বড় অংশই থাকছে। এদিকে দলের ভাঙন ঠেকাতে সংস্কারপন্থিদের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙন ঠেকাতে দেশ ও বিদেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সফর করছেন। জানা যায়, ১৫ এপ্রিল জামায়াত থেকে পদত্যাগ করা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের আইন পেশার ৪০ বছর পূর্তিতে গত ১২ এপ্রিল লন্ডনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে যাতে দলের কেউ না যান, সেই নির্দেশনা ছিল। এর আগে ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে মানবিক সংহতি জানাতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন মজিবুর রহমান। ওই অনুষ্ঠানেও দলের কেউ যাতে অংশ না নেন, সেজন্য জামায়াতের শীর্ষ পর্যায় থেকে  মৌখিকভাবে সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন প্রক্রিয়ার সঙ্গে মূল দলের বা ছাত্রশিবিরের কেউ যাতে শামিল না হন সেজন্য কেন্দ্রীয় নেতারা নজরদারি বাড়িয়েছেন। মজিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রচলিত রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নিদারুণ ব্যর্থতার মাঝেও আমরা সম্প্রতি কিশোর-তরুণদের আশা জাগানিয়া বিদ্রোহ দেখেছি। তরুণ প্রজন্ম এই রাষ্ট্র মেরামতের দাবি তুলেছে। এই দাবি ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতাকামী প্রতিটি নাগরিকের আকাক্সক্ষার প্রতিধ্বনি। আশা করি, এতে নতুন প্রজন্মের চিন্তা ও মনোভাবের প্রতিফলন ঘটাবে আমাদের নতুন সংগঠন। সূত্র জানায়, সংস্কারপন্থিদের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ গভীর চাপ ও উদ্বেগে ফেলেছে জামায়াতের মূল নেতৃত্বকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়াসহ দলের সংস্কার ঠেকাতে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক সফর কর্মসূচি শুরু করেছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয়  নেতারা। তারা এসব সফরে সংস্কারপন্থি নেতাদের অবস্থানের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। সংস্কারপন্থি নেতারা বলছেন, তাদের রাজনৈতিক উদ্যোগ ঠেকাতে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। দলের কোনো পর্যায়ের  নেতা-কর্মীরা যাতে এ প্রক্রিয়ায় অংশ না নেন, সেজন্য কড়া নজরদারির পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী অঞ্চলের জামায়াত ও শিবিরের অন্তত অর্ধশত নেতা ও সদস্যকে ডেকে আলাদাভাবে কথা বলেছেন জামায়াত নেতারা। ডেকে নেওয়া নেতাদের কাউকে কাউকে শাসানো হয়েছে। জানা গেছে, সংস্কারপন্থিদের রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ ঠেকাতে দলের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান মালয়েশিয়া হয়ে এখন লন্ডন সফর করছেন। দেশ দুটিতে জামায়াতের অনেক নেতা-কর্মী ও সমর্থক আছেন, যাদের একটি বড় অংশ জামায়াতের সংস্কার চায়। গত সপ্তাহে শফিকুর রহমান মালয়েশিয়ায় যান।  সেখানে তিনি একাধিক ঘরোয়া সাংগঠনিক বৈঠক করে সংস্কারপন্থিদের ব্যাপারে নেতিবাচক বক্তব্য  দেন। জামায়াত থেকে সদ্য পদত্যাগী নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। দলীয় সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে শফিকুর রহমান সৌদি আরব সফর করেন।  সেখানেও তিনি সংগঠনের প্রবাসী দায়িত্বশীলদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে সংস্কারপন্থিদের ব্যাপারে সতর্ক করেন। শফিকুর রহমান সৌদি আরব থেকে ফিরে আসার পর দেশটি সফরে যান সংস্কারপন্থি বলে পরিচিত নেতা শাহজাহান চৌধুরী। তাকে অনেক দিন ধরেই দলে কোণঠাসা করে রাখার অভিযোগ আছে।

সর্বশেষ খবর