সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

বিস্ফোরক মামলায় তিন রোহিঙ্গার জেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর লালবাগ থানার বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের একটি মামলায় তিন রোহিঙ্গা জঙ্গিকে ১০ বছর করে কারাদ-  দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস কারাদ- দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার চার নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। দন্ডপ্রাপ্ত তিনজন হলেন নূর হোসেন ওরফে রফিকুল ইসলাম, ইয়াসির আরাফাত ও ওমর করিম। এদের মধ্যে ওমর করিম পলাতক। বাকি দুজনকে রায় ঘোষণার আগে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে ওই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, দ প্রাপ্ত এ আসামিরা মিয়ানমারের জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন (এআরইউ) ও নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্টারের (জিআরসি) সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ভারতের বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনার পর আন্তঃদেশীয় জঙ্গি নেটওয়ার্কের খোঁজে বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দাদের মধ্যে যে তথ্যবিনিময় হয়েছে তার ভিত্তিতেই ওই তিনজনকে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকায় গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় পাঁচটি ডেটোনেটর, দুটি এক্সপ্লোসিভ জেল এবং বিস্ফোরক তৈরির উপাদান।

এ ঘটনায় পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের উপপরিদর্শক এস এম রাইসুল ইসলাম পর দিন লালবাগ থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। মামলায় আসামিদের মধ্যে নূর হোসেনের বাড়ি মিয়ানমারের আকিয়াবের দানেশপাড়া এলাকায়। ইয়াসির আরাফাতের বাড়ি আকিয়াবের মংডু থানার হাসুরাধা গ্রামে। আর ওমর করিমের বাড়ি আকিয়াবের পাথরকিল্লার তিফারাং এলাকায়। শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আসার পর তারা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের দিলপাড়া এলাকায় বসবাস শুরু করেন। আরাফাত চট্টগ্রামের পটিয়া আল জামিয়া কওমি মাদ্রাসায়, নূর হোসেন হাটহাজারীর ইছাপুর মাদ্রাসায় এবং ওমর করিম হাটহাজারীর ফতেপুর মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, নাশকতার জন্য আসামিরা একত্রিত হয়েছিলেন। আবদুল মজিদ, সালামত উল্লাহ, কবির, মোহাম্মদ আলম, শফি উল্লাহ, খালেদ, সাদিক হোসেন ও আমজাদ তাদের সব ব্যাপারে সহযোগিতা করে থাকেন। এসব লোকজন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য এলাকার বাসিন্দা। তারা সবাই আরএসও, জিআরসি, এআরইউ ও ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। যে বিস্ফোরক আসামিদের কাছে পাওয়া গেছে, তা দিয়ে বোমা বানানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। এ ঘটনায় পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের উপপরিদর্শক এস এম রাইসুল ইসলাম ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বাদী হয়ে লালবাগ থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। পরে ঘটনার তদন্ত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের এসআই আবদুল কাদের মিয়া তিন রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৩ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা আন্তর্জাতিক ইসলামী উগ্রপন্থি সংগঠনের সহায়তায় বাংলাদেশে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করার কথা স্বীকার করেন। ভারতের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে। আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া বিস্ফোরক-জাতীয় পদার্থ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক, যা বড় ধরনের নাশকতামূলক কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এরপর অভিযোগপত্র ২০১৫ সালের ১২ জুলাই আমলে নিয়ে তিন মিয়ানমারের নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রায় ঘোষণার আগে ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত।

সর্বশেষ খবর