শনিবার, ৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

তুরাগ দখলদারদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলার প্রস্তুতি

কর্ণফুলী তীর ফের বেদখলের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম, সাভার ও টঙ্গী প্রতিনিধি

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর আনু মাঝির ঘাট এলাকায় অভিযানে প্রায় সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও এখন সেখানে গড়ে উঠছে পান ও চায়ের টং দোকান, ব্যবসায়ীদের পণ্য গণনার বৈঠকখানা। এভাবে কর্ণফুলী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর ফের বেদখলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে তুরাগ ও বুড়িগঙ্গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অব্যাহত রয়েছে।

কর্ণফুলীর উচ্ছেদ নিয়ে স্থানীয়দের শঙ্কা, প্রথমে ছোট স্থাপনা তৈরি করে পর্যায়ক্রমে বড় স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। উচ্ছেদকৃত স্থানে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের যে কথা বলা হয়েছিল, তা দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে ফের বেদখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গত সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আনু মাঝির ঘাটের মতো মাঝির ঘাট এলাকায়ও তৈরি হয়েছে ছোট ছোট টং দোকান। সেখানে উচ্ছেদকৃত স্থানে রাখা হয়েছে লবণ, ডালের বস্তাসহ বিভিন্ন পণ্য। একই সঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে উচ্ছেদের পরের লোহা, ইট, কংক্রিটসহ বিভিন্ন উচ্ছিষ্টাংশ। একই চিত্র উচ্ছেদকৃত আদম ঘাট, লবণ ঘাট, বিবি মসজিদ লেন, বারিক বিল্ডিং মোড়ের ঘাট, সদরঘাট লাইটারেজ জেটি, কর্ণফুলী ঘাটসহ উচ্ছেদকৃত সব স্থানে। উচ্ছেদের সময় কিছু স্থাপনা আংশিক ভেঙে দেওয়ার পর বাকিটা মালিকপক্ষকে ভাঙতে নির্দেশ দেওয়া হলেও এসব স্থাপনা আগের মতোই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তাছাড়া উচ্ছেদের সময় জেলা প্রশাসনের দেওয়া লাল রংয়ের নিষেধাজ্ঞা সাইনবোর্ডটি কয়েক স্থানে দেখা যায়নি। স্থানীয় শ্রমিকরা জানান,  অভিযানের পর উচ্ছেদকৃত স্থান রক্ষায় আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসন বা বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এসব স্থানে কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। 

গত ৪ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম চলে। প্রথম ধাপে নগরের সদর ঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে উচ্ছেদ চলে। উচ্ছেদ হয় ২৩০ স্থাপনা। উদ্ধার হয় বেদখলে থাকা ১০ একর ভূমি। আলোর মুখ দেখে পাঁচটি খালের মুখ। তবে এখনো কর্ণফুলীর তীরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ১৯৫৯টি স্থাপনা। উচ্ছেদ পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মামলার কারণে কর্ণফুলী নদীর দ্বিতীয় দফার উচ্ছেদ শুরু করা যাচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তি হলেই আমরা ফের অভিযান শুরু করব।’ তিনি বলেন, ছোট দোকান গড়ে উঠলেও সেগুলো আমাদের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের সময় ভেঙে দেব। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, উচ্ছেদ কার্যক্রম সম্পূর্ণ শেষ হলেই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হবে। এর আগে তো করা সম্ভব নয়।  

দখলদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলার প্রস্তুতি : রাজধানীর সাভার ও মিরপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় তুরাগ নদের দখল হওয়া জায়গা উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিন পর্র্বে চলা অভিযানে এখন পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের ৬০ একর জমি উদ্ধার হয়েছে। উচ্ছেদ হয়েছে ২ হাজার ৭৯৬টি অবৈধ স্থাপনা। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। তৃতীয় পর্বের অভিযান এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ৩০ দিন চলছে।

বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অভিযানের পর তীরভূমি সংস্কার করে ১০ হাজার সীমানা পিলার স্থাপন এবং নাব্যতা ফিরিয়ে দিতে নদীতে ড্রেজিং করা হবে। নদী তীরভূমি অংশ সংরক্ষণ করে ঢাকাবাসীর জন্য নদীকে বিনোদনের জায়গায় পরিণত করতে ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নদীপাড় বাঁধাই, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সবুজায়ন, লাইটিং এবং ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে। দখলদাররা তুরাগের বিভিন্ন অংশ ইচ্ছামতো ভরাট করছে। সীমানা পিলারকেই সামনে রেখেই চলছে দখল। স্থানীয়রা বলছেন, জমির বৈধতা প্রমাণ করতে আগের পিলার সরিয়ে নতুন পিলার বসানো হচ্ছে। তার সঙ্গে চলছে ইটভাটা ও হাউজিংয়ের কাজ। ইটভাটার মালিকরা মানছে না সীমানা নির্ধারণী। দখলী এলাকায় নেই পিলারের অস্তিত্ব। তবে আছে পিলার ভাঙার প্রমাণ। জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেছেন, তুরাগ বাঁচাতে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করতে হবে নতুন করে। মরণ দশায় নদীটি রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাট নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, রাজধানীর চারপাশের নদ-নদী উচ্ছেদ শেষে অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের জন্য মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। এ জন্য বুড়িগঙ্গা-তুরাগের দখলদারদের একটি নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি না হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

তুরাগের অবৈধ স্থাপনা সরাতে পাঁচ দিন সময় : টঙ্গী প্রতিনিধি জানান, তুরাগ নদের উভয় পাশে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক দিনের অভিযানে শত শত বাড়িঘর দোকানপাট, কলকারখানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তুরাগ তীরে নির্মিত ওয়াকওয়ে থেকে ৩০/৪০ ফুটের মধ্যে যেসব স্থাপনা ভাঙা হয়নি তা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কোনো নোটিস কিংবা কোনো ক্ষতিপূরণ না দিয়েই বহুতল ভবনসহ শত শত স্থাপনা ভেঙে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে উচ্ছেদ অভিযানকালে পাগাড় অনন্ত গ্রুপের প্যারাডাইস কারখানার শ্রমিক কর্তৃক বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের লোকজন হামলার শিকার হন। বিআইডব্লিউটিএ বলেছে, নদী তীর দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হবে ও ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। বিআইডব্লিউটিএ এর যুগ্ম পরিচালক আরিফ হাসনাত বলেন, পাগাড় ঝিনু মার্কেট, মাউসাইদ এলাকায় উভয় পাশে বেশ কিছু স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, টঙ্গী নোমান গ্রুপের জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ও আনোয়ার গ্রুপসহ  যেসব স্থাপনা মালিকদের আদালতের স্টে অর্ডার রয়েছে তাদের ভবন ভাঙা হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা নদী রক্ষায় আদালতে একটি রিট করার পর হাই কোর্টের আদেশে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমরা সেভাবেই উচ্ছেদ করছি। অবৈধভাবে কোনো স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। পূর্বের সীমানা ঠিক ছিল না।

সর্বশেষ খবর