শনিবার, ৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা

এ যেন এক নরকক্ষেত্র সব এসি বিকল

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

গরম থেকে রক্ষা পেতে রোগীদের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে এসি থাকলেও, তা চলে না। এক বছর ধরে ভিআইপি কেবিন-১-এর এসিগুলো পর্যন্ত বিকল হয়ে পড়ে আছে। ফলে স্বাস্থ্যসেবার এ ক্ষেত্রটি প্রচ- গরমে এখন যেন নরকক্ষেত্র। হাঁসফাঁস অবস্থা চলছে মুমূর্ষু রোগীদের।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের ভিআইপি এবং ভিভিআইপি কেবিনের কোনো এসিই সচল নয়। প্যাথলজি বিভাগের ৩টি এসিও বিকল। অচল আলট্রাসনো করার কক্ষের এসিও। ১৫টি এসির মধ্যে ১১টি এসিই  বিকল রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। অবশ্য ব্যতিক্রম অস্ত্রোপচার কক্ষ, তত্ত্বাবধায়কের কক্ষ, মিলনায়তন এবং কার্ডিওলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞর কক্ষ। এগুলোতে এসি সচল আছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এসির জন্য গণপূর্ত বিভাগকে চিঠির পর চিঠি দিয়ে হয়রান হয়ে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কোনো কথাই বলছে না তারা। এনিয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দিতেও রাজি হননি গণপূর্তের ব্রাহ্মণবাড়িয়া নির্বাহী প্রকৌশলী ইমতিয়াজ আহমেদ। জানা গেছে, হাসপাতালের চারতলায় রোগী কেবিনের এসি অচল থাকায় ‘জেলা প্রশাসক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন’ জানিয়ে গত বছরের ৮ আগস্ট হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সফিকুল ইসলাম গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীকে একটি চিঠি দেন। ৬৬১২ নম্বর স্মারকের ওই চিঠিতে এর এক মাস আগে এ বিষয়ে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এসব চিঠিতে ‘বিষয়টি অতীব জরুরি’- লেখা ছিল। জেলা সদর হাসপাতালে ৩টি ভিআইপি ও একটি ভিভিআইপি কেবিন রয়েছে। এসব কেবিনে মোট ৬টি এসি রয়েছে। ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত হোসেন গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দেওয়া আরেকটি চিঠিতে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় প্যাথলজি বিভাগের ৩টি এসি নষ্ট থাকার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, এতে প্যাথলজির রি-এজেন্টের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ না হওয়ায় রি-এজেন্টের মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই বছরে হাসপাতালের জন্য মোট ২০টি নতুন এসি চেয়ে গণপূর্তকে আরেকটি চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই চিঠিতে ১০টি এসি মেরামতের কথাও বলা হয়। হাসপাতালের স্টোরের জন্যও এসি জরুরি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে এসি না থাকায় ওষুধের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে- বলে জানানো হয়। এসি চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একের পর এক চিঠি দিয়ে গেলেও কোনো কর্ণপাতই করেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি কেবিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসি নষ্ট থাকায় রোগী এবং আত্মীয়-স্বজনরা নিজেরাই বাড়তি ফ্যানের ব্যবস্থা করেছেন। ভিআইপি ১ নম্বর কেবিনে শয্যাশায়ী ধনঞ্জয় সাহা। তার কন্যা দীপিকা সাহা বলেন, ‘এটা ভিআইপি কেবিন, কিন্তু এর এসিই নষ্ট। আছে আরও অনেক সমস্যা।’ পাশের আরেকটি কেবিনে ভর্তি রিফাতের মা জানান, প্রচ- গরমে খিঁচুনি উঠছে তার ছেলের। ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শওকত হোসেন জানান, এসি না থাকায় রোগীরা তীব্র গরমে কষ্ট করছেন। কেবিনের সবকটি এসিই নষ্ট। বারবার গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দিলেও তারা নতুন এসি স্থাপন বা পুরনো এসিগুলো মেরামত করে দেওয়ার কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর