রবিবার, ৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

আসামি শাহাদাতের বোরকা উদ্ধার

নুসরাত হত্যায় চার্জশিট এ মাসেই

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ফেনী প্রতিনিধি

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সময় ব্যবহৃত আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমের বোরকাটি উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমকে দ্বিতীয় দফা রিমান্ড নিলে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বোরকাটি উদ্ধার করা হয়। গতকাল সকালে সোনাগাজী ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা-সংলগ্ন পুকুর থেকে বোরকাটি উদ্ধার করে পিবিআই। এদিকে রিমান্ড শেষে এজাহারভুক্ত দুই আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম ও জাবেদ হোসেনকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে বিকালে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক ধ্রুব জ্যোতি পালের আদালতে তোলা হয়। আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমকে দুই দফা ও জাবেদ হোসেনকে তিন দফা রিমান্ডে নিয়েছিল পিবিআই। ১৪ এপ্রিল শাহাদাত হোসেন শামীম ও ২০ এপ্রিল জাবেদ হোসেন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিম শ্রেণির আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ডেকে কৌশলে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে তার গায়ে তারা কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচ দিন পর ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান। পরদিন ১১ এপ্রিল বিকালে জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। নুসরাতের মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। আলোচিত এ মামলায় এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের মধ্যে হত্যার নির্দেশদাতা অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা এবং হত্যায় সরাসরি জড়িত পাঁচজনসহ নয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

চার্জশিট এ মাসেই : ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত মোটামুটি শেষ। এতে ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হচ্ছে। কিছু কাগজপত্র তৈরি করে চলতি মাসের যে কোনো দিন আদালতে চার্জশিট দাখিল হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। গতকাল দুপুরে রাজধানীর বিএফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক বিতর্ক প্রতিযোগিতা শেষে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ‘সাহসিকা নুসরাত, তুমিই যুক্তি তুমিই প্রতিবাদ’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় ইডেন মহিলা কলেজ ও ঢাকা কলেজ সমান নম্বর পাওয়ায় উভয় দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নারী নিপীড়নে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

পিবিআই প্রধান বলেন, নুসরাতকে হত্যার অভিযোগে তার সহপাঠী, মাদ্রাসার ছাত্র, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ রকম একটি জঘন্যতম হত্যাকাে র দায় জড়িত সবাইকে নিতে হবে। এ ঘটনার আগে ও পরে যারা মদদ জুগিয়েছে, তারাও যাতে শাস্তি পায়, সে জন্য পুলিশের অন্য সংস্থাগুলোও কাজ করছে। নুসরাত হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে করা আইসিটি মামলার তদন্ত শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। আদালতে তারা সময়ের আবেদন করেছেন। ওসি ও এসআইর মোবাইল দুটি জব্দ করেছে তদন্ত দল। আদালতের কাছে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের সুপারিশ করবে পিবিআই। এর আগে ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান। এরপর দেশজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যে মামলাটি থানা থেকে সরিয়ে পিবিআইকে দায়িত্ব দেয় পুলিশ সদর দফতর। ২৭ মার্চ সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের ছাত্রী নুসরাতের পরিবারের করা যৌন নিপীড়নের মামলায় গ্রেফতার হন ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ। কারাগারে থেকেই তিনি নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে পিবিআইর তদন্তে উঠে এসেছে। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার পর ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান অধ্যক্ষ সিরাজকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। নুসরাতের মৃত্যুর পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

সর্বশেষ খবর