রবিবার, ৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

রমজানে বাজার নিয়ে সতর্ক সরকার

চাঁদাবাজি ও মজুদদারি ঠেকাতে মাঠে গোয়েন্দা সংস্থা, পাইকারি ও খুচরা বাজারে মনিটরিং টিম ১৮৭টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পথে পথে বিক্রি করবে টিসিবি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক রয়েছে সরকার। কারসাজি বা পণ্য মজুদ করে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে সে জন্য নজরদারি বাড়ানো হবে। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাঠে নেমেছে। পথে চাঁদাবাজি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অবৈধ মজুদদারি ঠেকাতে এবং পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনারদের চিঠি লিখেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি। এ ছাড়া আগের বছরের মতো সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং টিম পুনর্গঠন করে বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য দিতে সারা দেশে ১৮৭টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাক নিয়ে বাজারে নেমেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি বলেন, উৎসবকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু লোক পথে পথে চাঁদাবাজি করে। এ কথা বিবেচনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দিয়েছি। এবারই প্রথম সব বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যে করেই হোক পথের চাঁদা বন্ধ করা হবে। কারণ যে চাঁদা আদায় করা হয় সেটা পণ্যের ওপর পড়ে। এ বিষয়ে আমরা খুব সতর্ক। মন্ত্রী বলেন, আসন্ন রমজানে যে কোনো মূল্যে পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কোনো অবস্থায়ই অসাধু ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিতে চাই না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের তথ্য অনুযায়ী দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ১৮ লাখ টন হলেও পবিত্র রমজান মাসে এ চাহিদা দাঁড়ায় তিন লাখ টন। চলতি অর্থবছরের ৯ মার্চ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৬৯ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। আর এই সময়ে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার টনের। চিনির বার্ষিক চাহিদাও ১৮ লাখ টন এবং রমজানে ৩ লাখ টন। ৯ মার্চ পর্যন্ত চিনি আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৭৩ হাজার টন এবং এই সময়ে এলসি খোলা হয়েছে ১২ লাখ ৪৭ হাজার টন চিনির। পিয়াজ, ছোলা, মসুর ডাল, খেজুর এসব পণ্যও চাহিদার তুলনায় মজুদ ভালো রয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, এ মুহূর্তে ছোলা, ডাল, চিনি, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মজুদ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চাঁদাবাজি ও অবৈধ মজুদদারির কারণে বাজার যাতে অস্থিতিশীল না হয় সে বিষয়ে সতর্ক নজরদারি কার্যকর রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নিত্যপণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে পারাপার ও লোড-আনলোডিংয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে বন্দর ও ঘাট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে গত ১৭ এপ্রিল পাঠানো চিঠিতে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জেলা ও উপজেলায় বাজারে পণ্য সরবরাহ ও মজুদ অটুট রাখা, নির্বিঘ্নে পণ্য পরিবহন, অবৈধ মজুদ প্রতিরোধ এবং পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম জোরদারসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগ ও সহায়তা কামনা করেন।  সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রাজধানীসহ সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোকে মনিটরিংয়ের আওতায় রাখতে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। গত ১৮ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নারগিস মুরশিদ এক চিঠিতে রাজধানীতে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য ১১টি টিম পুনর্গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি টিম সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে সময়ে সময়ে দোকানদারদের সঙ্গে  আলোচনা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।  বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষদের কথা বিবেচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি বছরের মতো টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ন্যায্যমূল্যে বাজারে সরবরাহ করতে উদ্যোগ নিয়েছে। টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পবিত্র রমজান উপলক্ষে গত ২৩ এপ্রিল থেকে সারা দেশে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি শুরু করেছি আমরা। এই কর্মসূচির অধীন সারা দেশে ট্রাকে করে ১৮৭টি স্পটে, রাজধানীতে ৩৫টি স্পটে, চট্টগ্রামে দশটি স্পটে, প্রতিটি বিভাগে ৫টি করে এবং প্রতিটি জেলায় একটি করে স্পটেসহ সারা দেশে মোট ১৮৭টি স্পটে ভ্রাম্যমাণ খোলা ট্রাকে নিত্যপণ্য বিক্রি করা হবে। পাশাপাশি টিসিবির নিজস্ব ২ হাজার ৮২৭ জন ডিলার ও নিজস্ব ১০টি খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমেও নিত্যপণ্য বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতি কেজি চিনি ৪৭ টাকা, মসুর ডাল ৪৪ টাকা, সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা এবং খেজুর ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান টিসিবির কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর