শিরোনাম
রবিবার, ৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

সাত রাজকন্যার গ্রাম খাজুরা লাহিড়ীপাড়া

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

সাত রাজকন্যার গ্রাম খাজুরা লাহিড়ীপাড়া

উদ্যোগ ও সংরক্ষণের অভাবে নাটোরের সাত রাজকন্যার গ্রাম নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা লাহিড়ীপাড়ার ইতিহাস এবং ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। একইভাবে লাহিড়ীপাড়া গ্রামের শতবর্ষী মঠ মন্দিরগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জানা যায়, এক সময় এই গ্রামে ২২ জমিদারের বাস ছিল। অর্ধ বঙ্গেশ্বরী নাটোরের রানী ভবানীর কন্যাসহ ৭ রাজকন্যার বিয়ে হয় এই গ্রামের ৬ জমিদার পুত্রের সঙ্গে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হলে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায়। ফলে পর্যায়ক্রমে এসব জমিদার পরিবার তাদের বসতবাড়ি ফেলে রেখে ভারতে চলে যান। তাদের ফেলে যাওয়া বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও দু-একটি বাড়ির চিহ্ন এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এগুলো এখনো অতীত ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। জমিদারদের বংশধরদের কেউ কেউ এখনো এই গ্রামে সাধারণভাবেই বাস করছেন। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বিশাল হালতি বিলের উত্তর দিকের শেষ প্রান্তে এই খাজুরা লাহিড়ীপাড়া গ্রাম। সাত রাজকন্যার গ্রাম বলেই অধিক পরিচিত এই গ্রাম। জেলা সদর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। নলডাঙ্গা উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় সমপরিমাণ। এই গ্রামের উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। এই গ্রামের ৬ জমিদার পুত্র শামাকান্ত লাহিড়ী, উম্মেকা কান্ত লাহিড়ী, সুরেন্দ্র নাথ লাহিড়ী, রঘুনাথ লাহিড়ী, সুরেন্দ্র মোহন লাহিড়ী ও জীতেন্দ্র নাথ লাহিড়ীর সঙ্গে ৭ রাজকন্যার বিয়ে হয়। স্থানীয়রা জানান, নাটোরের রানী ভবানীর একমাত্র মেয়ে তারা সুন্দরীর বিয়ে হয় এই গ্রামের জমিদার রঘুনন্দন লাহিড়ীর সঙ্গে। জমিদার শামাকান্ত লাহিড়ী বিয়ে করেন দুই রাজকন্যাকে। প্রথম স্ত্রীর কথা কেউ বলতে না পারলেও দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার জমিদার কন্যা ইন্দুবালা।

স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী মামুনুর রশীদ, ওই গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সামাদ ও স্থানীয় স্কুল শিক্ষক সুকুমার দাস জানান, দেশ ছেড়ে যাওয়ায় ওই জমিদারদের জমিজমা ও বাড়িঘর প্রায় দখল হয়ে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে লাহিড়ীপাড়া গ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য। তারা জমিদারদের ইতিহাসসহ জমিদারদের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা সাত রাজ কন্যার গ্রাম হিসেবে পরিচিত খাজুরা লাহিড়ীপাড়া গ্রামের এই ২২ জমিদারের ইতিহাস সংরক্ষণ করে রাজসিক নাটোরের ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের পাশাপাশি প্রত্নতত্ত্বসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান। তারা এই গ্রামকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের প্রতি দাবি জানান।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, এলাকায় সরেজমিন গিয়ে প্রবীণ ব্যক্তি ও জমিদারদের বংশধরদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং ইতিহাস সংগ্রহের জন্য একজন শিক্ষককে ওই গ্রামে পাঠাবেন।

সর্বশেষ খবর