শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঐতিহ্য চকবাজারের ইফতারে

রাশেদ হোসাইন

ঐতিহ্য চকবাজারের ইফতারে

মুঘল শাসন শেষ হলেও পুরান ঢাকায় মোঘলদের ইফতার রয়ে গেছে। ৪শ বছর আগে পুরান ঢাকার এ চকবাজারের ইফতারের সূচনা হয় মুঘল আমলে। আর তখন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এ চকবাজার। ঢাকা অনেক বিস্তৃত হয়েছে সব দিকেই। কিন্তু ব্যবসায়িক বিবেচনায় গুরুত্ব হারায়নি চকবাজার। কালের বিবর্তনে চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতারির বাজার যেন এক উৎসবে পরিণত হয়েছে। রমজানের তৃতীয় দিনে গতকাল সেই উৎসব দেখা গেছে। চকবাজারে নানা স্বাদের মুখরোচক খাবারের মনকাড়া সুবাস চারদিকে। আর সেই সুবাসকে আরও এগিয়ে দিচ্ছে বিক্রেতার হাঁকডাক ‘বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙ্গায় ভইরা লইয়া যায়’। চকের ইফতার বাজারের সেই পরিচিত দৃশ্য। মূলত চকবাজারের শাহী মসজিদকে কেন্দ্র করে এর আশপাশেই বসে ইফতারির দোকানগুলো। ফুটপাথ থেকে শুরু করে সড়কের মাঝপথেও রয়েছে দোকান। এসব দোকানে রমজানের প্রথম দিন থেকেই বড় আকারে ইফতারির আয়োজন হয়। এখানে ঐতিহ্যবাহী ইফতার পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত খাবার হচ্ছে ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার এটি। এ খাবারটি মোট ৩৬টি আইটেম ও ১৮টি মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। গরুর মগজ, গরুর কলিজা, মুরগির মাংসের কুচি, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, ডিম, আলু, ঘি, বুটের ডালসহ নানা পদের খাবার ও নানা ধরনের মসলার মিশ্রণে খাবারটি তৈরি করা হয়। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া খাসির কাবাব প্রতি কেজি ৮০০, গরুর কাবাব কেজি ৬০০ টাকা। খাসির রানের রোস্ট প্রতি পিস ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি ছোট মুরগির রোস্ট ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, কবুতরের রোস্ট ১৩০ টাকা। এ ছাড়া চিকন জিলাপি কেজি ১২০ টাকা, বড় শাহী জিলাপি ২০০, দইবড়া কেজি ১৮০ থেকে ২০০, চিকেন স্টিক পিস ৭০ থেকে ৯০, জালি কাবাব ২০ থেকে ৪৫, বিফ স্টিক ৪০ থেকে ৬০, কিমা পরোটা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, টানা পরোটা ২০ টাকা পিস, হালিম (বাটির আকারভেদে) ৬০ থেকে ৩০০ টাকা, ডিম চপ ১৫ টাকা, সমুচা ৫ থেকে ১০, পনির সমুচা ৫, পিয়াজু ৫, আলুর চপ ৫, বেগুনি ৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। এখানকার অস্থায়ী দোকানগুলোতে বাহারি ইফতারের পসরা নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।

সুতি কাবাব, জালি কাবাব, টিক্কাসহ নানা পদে সাজানো হয়েছে টেবিল। রোজাদারের তৃষ্ণা মেটাতে রয়েছে লাবাং, মাঠা। আর সঙ্গে আছে পেশতা শরবত আর লাচ্ছি। মৌসুমি ফলের শরবতেরও রয়েছে বিশাল আয়োজন। আছে ফলের সমাহার। ইফতার সামগ্রীর দাম বাড়তি প্রসঙ্গে বিক্রেতা মোস্তাকিম রহমান বলেন, গরু ও খাসির মাংসের দাম অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া ছোলা, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বাড়তি। এ জন্যই ইফতার পণ্যের দাম বেড়েছে। পুরান ঢাকার পাশাপাশি রাজধানীর অন্য এলাকার বাসিন্দারাও চকবাজারে ছুটে আসেন ইফতার সামগ্রী কিনতে। ধানমন্ডি থেকে চকবাজারে ইফতারি কিনতে আসা শাহজাহান বলেন, এখন বিভিন্ন জায়গায় বাহারি ইফতার বিক্রি হয়। তারপরও চকবাজারে আসি ইফতার কিনতে। এখানে আসলে আলাদা এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে। কামরাঙ্গীচরের বাসিন্দা দিল মোহাম্মদ বলেন, এখানে ইফতার কিনতে না এলে মনে হয় রমজানই শুরু হয়নি। খালিদ নামের এক ক্রেতা বলেন, দিন দিন অনেক খাবার মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। এর পেছনে রয়েছে চকবাজারের ঐতিহ্যের নাম ভাঙিয়ে একশ্রেণির মৌসুমি ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের ভেজাল খাবার পরিবেশন। এখানকার খাবার পরিবেশন করা হয় খোলা আকাশের নিচে। অনেকে নামমাত্র ছাউনি ব্যবহার করে, অনেকে তাও করে না। ধুলাবালি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলে রান্না ও খাবার পরিবেশন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর